আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারতের লাদাখে রাজ্যের মর্যাদার দাবিতে চলমান আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে চার জন নিহত হওয়ার পর অঞ্চলটির রাজধানী লেহ এবং কারগিল জেলায় কারফিউ জারি করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। খবর বিবিসি'র।
বুধবারের (২৪ সেপ্টেম্বর) সহিংসতায় আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন। এ সময় ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) একটি কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া সোনম ওয়াংচুকের বিরুদ্ধে সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে এনেছে দেশটির সরকার। তবে ওয়াংচুক এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
লাদাখে মুসলিম ও বৌদ্ধ—দুই সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করেন। ২০১৯ সালে বিজেপি সরকার লাদাখকে প্রাক্তন ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য থেকে আলাদা করে সরাসরি কেন্দ্রীয় শাসন জারি করে। তখন থেকেই তারা আধা-স্বায়ত্তশাসনের অধিকার হারায়।
লাদাখের জনসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ এবং এটি চীন ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী। যেখানে সহিংসতা হয়েছে, সেই লেহ মূলত বৌদ্ধ অধ্যুষিত। তারা বহু বছর ধরে আলাদা অঞ্চল চেয়ে আসছিল। অন্যদিকে মুসলিমপ্রধান কারগিল জেলা বরাবরই চেয়েছিল জম্মু-কাশ্মীরের সঙ্গে যুক্ত হতে।
কিন্তু ২০১৯ সালের পর থেকে দুই সম্প্রদায়ই এক হয়ে রাজ্যের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও ভূমি ও চাকরিতে কোটাসহ স্বায়ত্তশাসন দাবি করছে। গত কয়েক মাস ধরে মাঝে মাঝেই বিক্ষোভ হচ্ছিল। বুধবারের ঘটনা সবচেয়ে ভয়াবহ। ঠিক কীভাবে সহিংসতা শুরু হলো তা স্পষ্ট নয়।
বুধবার রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্দোলনের নেতা সোনম ওয়াংচুককে দায়ী করেছে। বুধবার বিক্ষোভের পর গভীর রাতে এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অনশনরত ওয়াংচুক উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, আরব বসন্তের মতো আন্দোলনের কথা বলেছেন এবং নেপালের জেন-জি আন্দোলনের উদাহরণ টেনেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, আন্দোলনকারীরা বিজেপির স্থানীয় কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়, একটি পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে এবং অন্তত ৩০ জন পুলিশকে আহত করে।
ভারতের সংবাদ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, পুলিশ গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে বহু আন্দোলনকারী আহত হন। গুরুতর আহত চারজন পরে মারা যান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, 'আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে।'
১২ সেপ্টেম্বর থেকে অনশনরত ওয়াংচুক সহিংসতার পর অনশন ভেঙে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সহিংসতা আন্দোলনের ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই করবে না।
তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, বেকারত্ব আর সরকারের উদাসীনতায় তরুণদের ক্ষোভ জমে ছিল। সেই হতাশাই তাদের রাস্তায় নামিয়েছে।
আন্দোলনকারীরা পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে ও তাতে আগুন লাগিয়ে দেয়। ছবি: এপি
আন্দোলনের আরেক আয়োজক পদ্মা স্টানজিন বিবিসিকে বলেন, 'আমরা ভাবতেই পারিনি আন্দোলন এমন রূপ নেবে। এত দিন আমাদের কর্মসূচি সব সময় শান্তিপূর্ণ ছিল।'
লাদাখ বৌদ্ধ সংঘের সভাপতি চেরিং দর্জে লাকরুক বলেন, তরুণরা সহিংসতার পক্ষে নয়। 'তবে সরকারের টালবাহানা ও বেকারত্ব তাদের ক্ষুব্ধ করছে।'
তিনি বলেন, অনশন চলার মধ্যেও সরকার দীর্ঘদিন পরের তারিখে সংলাপের ঘোষণা দিয়েছে, সেটিই সবচেয়ে বেশি হতাশা তৈরি করেছে।
বর্তমানে লাদাখে বিপুল সেনা মোতায়েন রয়েছে। কারণ চীনের সঙ্গে এ অঞ্চলের সীমান্ত বিরোধ আছে। ২০২০ সালে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনের সংঘর্ষে অন্তত ২০ ভারতীয় ও ৪ চীনা সেনা নিহত হয়েছিলেন।
আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া সোনম ওয়াংচুক এর আগেও শিক্ষা ও জলবায়ু নিয়ে কাজ করে পরিচিতি পেয়েছেন। তিনি ও অন্য আন্দোলনকারীরা বলছেন, লাদাখের বিশেষ মর্যাদা বাতিল হওয়ার পর স্থানীয়দের হাতে ক্ষমতা দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি ছিল তা পূরণ হয়নি।
তাদের আশঙ্কা, বিশেষ মর্যাদা হারিয়ে লাদাখ বাইরের অর্থনৈতিক স্বার্থের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে এবং স্থানীয় সংস্কৃতি, ভূমি ও সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ কমে গেছে।
কেন্দ্রীয় সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, ২০২৩ সাল থেকে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং এতে 'অসাধারণ অগ্রগতি' হয়েছে। তবে সরকারের দাবি, 'কিছু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যক্তি অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট নয়।'
লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর কাভিন্দার গুপ্ত বুধবার বলেন, সহিংসতার তদন্ত শুরু হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, 'গত দুই দিন ধরে মানুষকে উসকানি দেওয়া হচ্ছে, এখানে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভকে বাংলাদেশ ও নেপালের আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এর গন্ধ ষড়যন্ত্রের।'
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারের বৈঠক বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার হওয়ার কথা। এছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের একটি কমিটি আগামী ৬ অক্টোবর স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবে।
এমআই