মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

চৌদ্দগ্রামে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের ২৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

সোমবার, অক্টোবর ১৩, ২০২৫
চৌদ্দগ্রামে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের ২৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

মো. এমদাদ উল্যাহ, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে এক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে প্রায় ২৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর ওই শিক্ষক আত্মসাতকৃত টাকা ফেরত না দিয়ে নিজেই নিজের বিদায় সংবর্ধনা আয়োজনের উদ্যোগ নেন। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচার দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযুক্ত মো. কামরুজ্জামান উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের তারাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি চৌদ্দগ্রাম উপজেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক পরিষদের সভাপতি এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। মঙ্গলবার তিনি নিজেই আয়োজিত বিদায় অনুষ্ঠান করবেন বলে জানা গেছে।

বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ১০ অক্টোবর কামরুজ্জামান তারাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এরপর থেকে তিনি বিদ্যালয়ের বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন।

২০১৯ সালে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অভ্যন্তরীণ এক নিরীক্ষায় ৯ লাখ ৯০ হাজার ৮৫৬ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মেলে। পরে তৎকালীন সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের মধ্যস্থতায় ৪ কিস্তিতে ৪ লাখ টাকা পরিশোধের শর্তে সমঝোতা হয়। তিনি ২ কিস্তিতে টাকা ফেরত দিলেও পরে আর বাকি টাকা পরিশোধ করেননি।

এরপর বর্তমান পরিচালনা কমিটি ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত আরেকটি নিরীক্ষা করে ১৪ লাখ ৬ হাজার ৭৮১ টাকা গরমিলের প্রমাণ পায়। এ বিষয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম মজুমদার প্রধান শিক্ষককে লিখিত নোটিশ পাঠান। নোটিশে তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। বরং তড়িঘড়ি করে নিজ উদ্যোগে নিজের বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন শুরু করেন।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী অভিযোগ তুলেছেন, প্রধান শিক্ষক রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

এদিকে বিদায় অনুষ্ঠানের ব্যানারে স্থানীয় ইউএনও, শিক্ষা কর্মকর্তা, জামায়াত নেতৃবৃন্দ ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট জামায়াত নেতারা জানিয়েছেন, তাদের অনুমতি ছাড়াই নাম ব্যবহার করা হয়েছে এবং তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।

২০১৯ সালের বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আইয়ুব আলী খান বলেন, “আমরা এক বছরের আয়-ব্যয় নিরীক্ষা করে ৯ লাখ ৯০ হাজার ৮৫৬ টাকার গরমিল পাই। এরপর তিনি দুটি কিস্তিতে ২ লাখ টাকা ফেরত দেন, বাকিটা দিয়েছেন কিনা জানি না।”

বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম মজুমদার বলেন, “অডিটে ১৪ লাখ টাকার গরমিল ধরা পড়ে। রিপোর্ট তাকে দেওয়া হলেও তিনি গ্রহণ করেননি। তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হলেও কোনো সাড়া দেননি। বিদায় অনুষ্ঠান সম্পর্কেও অফিসিয়ালি কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি।”

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। পরিচালনা কমিটি অবৈধভাবে অডিট করেছে। অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে আমি আইনি মোকাবেলা করব। বিদায় অনুষ্ঠানও সভাপতিকে জানিয়েই করা হচ্ছে।”

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ. কে. এম. মীর হোসেন বলেন, “একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কুমিল্লা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ করে কেউ পার পাবে না। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত শিক্ষককে অবশ্যই টাকা ফেরত দিতে হবে।”

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জামাল হোসেন বলেন, “এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তে প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

একে 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল