রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

লক্ষ্মীপুর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে

তাপমাত্রা বেড়ে কৃষি উৎপাদন ব্যহত, শঙ্কিত কৃষক!

রোববার, অক্টোবর ২৬, ২০২৫
তাপমাত্রা বেড়ে কৃষি উৎপাদন ব্যহত, শঙ্কিত কৃষক!

অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
 
বাড়ছে তাপমাত্রা, কমছে কৃষি উৎপাদনজলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লক্ষ্মীপুর অঞ্চলে কৃষির ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। আবহাওয়ার ধরনে পরিবর্তন হওয়ায় দিন দিন তাপমাত্রা বাড়ায় ফসলের উৎপাদন কমছে। একইসঙ্গে এই অঞ্চলে ইটভাটার প্রভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসল ও ফসলি জমি। ফসলি জমির টপসয়েল ইটভাটায় যাওয়ার দরুন একদিকে ফসল উৎপাদন হয় না অন্যদিকে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। জলবায়ুর এই সংকটে আগামী দিনে খাদ্য উৎপাদন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারে আশঙ্কা করছেন জলবায়ু ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবং কৃষি কর্মকর্তারা।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে আগামী দিনে পশুপালনের পাশাপাশি খাদ্যশস্য উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। অনেক এলাকায় ব্যাপক আকারে পানিস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। এবারের তীব্র গরমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূল জেলা লক্ষ্মীপুর অঞ্চলের কৃষি, মৎস্য, পানি, পরিবেশ ও দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারযোগ্য পানির সংকট প্রকট হয়ে উঠছে । গত ২৫ বছরে লক্ষ্মীপুর অঞ্চলে তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে  চলছে। ২০১১ সালে এই অঞ্চলের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ছিল ৩১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি বছর সেই তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে রেকর্ড অর্থাৎ ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে উপকূলীয় এই অঞ্চলে দিন দিন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব স্পষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে এমন তাপমাত্রার কারণে হুমকির মুখে পড়ছে কৃষি, মৎস্যসহ উৎপাদন খাত। তাই এখনই এ বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ।

উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বসবাস করছেন দক্ষিণ  উপকূলের মানুষজন। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে জীবন-জীবিকা। লবণাক্ততার কারণে জমিতে ফসল ফলাতে পারছেন না, উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষিজমি। গৃহপালিত পশুর খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। 

আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর থেকে গত ১৫ বছরে এক ডজনের বেশি দুর্যোগের কবলে পড়েছে উপকূল। ২০১৩ সালে ঘূর্ণিঝড় মহাসেন, ২০১৫ সালে কোমেন, ২০১৬ সালে রোয়ানু, ২০১৭ সালে মোরা, ২০১৯ সালে ফণী, ২০১৯ সালে বুলবুল, ২০২০ সালে আম্পান, ২০২১ সালে ইয়াস, ২০২২ সালে অশনি ও চিত্রা। এগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফল।

উপকূলের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ঘন-ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অনিয়ন্ত্রিত নদী প্রবাহ আটকে দেওয়া, পুকুর ভরাট ও সরকারি খালগুলো বেদখলের কারণে প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় পানির তীব্র সংকটের মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন তারা। সাধারণত শীত মৌসুম থেকে বর্ষা আসার আগ পর্যন্ত একটা লম্বা সময় এই দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাদের।

বর্ষা মৌসুম শেষে এবারও উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় পানি, প্ররিবেশ ও স্থানীয় কৃষির বিদ্যমান সমস্যাকে আরও প্রকট করে তুলেছে। ২০০৯ সালে আইলার পর থেকে প্রাকৃতিক পানির সংকট দেখা দেয়। গভীর নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গত দেড় দশকে পানির সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে।

মেঘনা নদী কমলনগরের তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের  মো: বেলাল হোসেন বলেন, ‘খরা, ঝড়, বৃষ্টি ও নদীভাঙন আমাদের নিত্যসঙ্গী। আইলার পর থেকে গোটা এলাকা উদ্ভিদশূন্য। লবণাক্ততার কারণে সব গাছ মারা যাচ্ছে। এলাকায় বসবাস করা খুবই কষ্টের। সবসময় সুপেয় পানির অভাবে থাকতে হয় আমাদের।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, লক্ষ্মীপুরে এক লাখ ৮৮ হাজার ৬২৬ হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে ৮১ শতাংশের বেশি অর্থাৎ এক লাখ ৫৩ হাজার ১১০ হেক্টর লবণাক্ততায় রূপ নিয়েছে। আর পতিত জমি রয়েছে ৪০ হাজার ৯৮১ হেক্টর। বন্যা, খরা ও জলাবদ্ধতার পাশাপাশি মাটি ও পানির লবণাক্ততা বেড়েছে। এতে ক্রমেই ধান ও শাকসবজি উৎপাদন কমে যাচ্ছে। গত চার বছরে আমন উৎপাদন কমেছে ৩৩ হাজার মেট্রিক টন।

 কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বলেন, ‘কিন্তু এর বেশি তাপমাত্রা থাকায় ধান উৎপাদন কমছে। বর্তমানে বাংলাদেশে গড় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়াচ্ছে। এতে ধানের পরাগায়ণ বাধাগ্রস্ত ও কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো: জহির হোসেন জানিয়েছেন, জেলায় ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে ধান ও সবজি চাষ হয়েছে। বাকি জমিতে তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হচ্ছে ইট ভাটার কারনে। ইটভাটায় জমির টপসয়েল পড়ানোর কারণে ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকরা। অনাবৃষ্টি ও তাপপ্রবাহের কারণে জেলায় সবজি চাষ বিলম্বিত হয়েছে। এতোদিনে বিভিন্ন সবজি বাজারে আসার কথা, কিন্তু আসেনি।’

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল