নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর পুরান ঢাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুন (৫৫) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। এই ঘটনায় অংশ নেওয়া দুই পেশাদার শ্যুটারসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার মূল পরিকল্পনাকারী আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী রনি। হত্যাকাণ্ডের জন্য দুই লাখ টাকায় চুক্তি হয়েছিল।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—শ্যুটার ফারুক ওরফে 'কুত্তা ফারুক' ও রবিন এবং তাদের সহযোগী ইউসুফ, রুবেল ও শামীম। অভিযানের সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি বিদেশি পিস্তল, ছয় রাউন্ড গুলি, দুটি ম্যাগাজিন, নগদ টাকা ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম।
শফিকুল ইসলাম বলেন, গত ১০ নভেম্বর ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রবেশপথে অস্ত্রধারীদের গুলিতে তারিক সাইফ মামুন গুরুতর আহত হন। প্রথমে তাকে ন্যাশনাল মেডিকেল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের পর গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ এবং গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে অপরাধীদের শনাক্ত করা হয়। এরপর সিলেট, নরসিংদী ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার রাতে নরসিংদীর ভেলানগর থেকে ফারুক, রবিন, শামীম ও রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডের পারিশ্রমিক হিসেবে পাওয়া ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানায়, আন্ডারওয়ার্ল্ডে ইমন-মামুন জুটির দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী রনি বেশ কয়েকবার মামুনকে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ, গত ১০ নভেম্বর মামুনের আদালতে হাজিরা দেওয়ার দিনটিকে টার্গেট করা হয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঘটনার আগের দিন রনি তার বাসায় সন্ত্রাসী রবিনকে ডেকে নেয়। ঘটনার দিন সকালে রনি ও ফারুকসহ অন্যরা জজ কোর্ট এলাকায় অবস্থান নেয়। রনি প্রথমে সুমন নামে একজনকে শুটিংয়ের দায়িত্ব দিলেও তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হওয়ায় পিস্তল দুটি ফারুক ও রবিনকে দেয়।
কামাল নামে আরেক সন্ত্রাসী মামুনকে অনুসরণ করে তার গতিবিধি সম্পর্কে শ্যুটারদের জানায়। সংকেত পেয়ে ন্যাশনাল মেডিকেলের সামনে মামুনকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গুলি চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ফারুক ও রবিন পালিয়ে যায়।
শফিকুল ইসলাম জানান, হত্যাকাণ্ডের পর রনির নির্দেশে শ্যুটাররা তাদের অস্ত্র ও অব্যবহৃত গুলি গাড়িচালক রুবেলের কাছে দেয়। রুবেল সেই অস্ত্রগুলো মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজারে দর্জি ইউসুফের বাসায় লুকিয়ে রাখে। পরে রুবেলকে সঙ্গে নিয়ে ইউসুফের বাসার মেঝে খুঁড়ে দুটি বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের পর পরিকল্পনাকারী রনি সবার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়, যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের শনাক্ত করতে না পারে। এরপর রুবেলের মাধ্যমে শ্যুটার ফারুক, রবিন ও শামীমকে সিলেটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তারা ভারত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে পালানোর জন্য ঢাকার দিকে রওনা হলে পথিমধ্যে ডিবি পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।
তিনি আরও জানান, হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী রনি পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। রনি একসময় মুদি দোকানি থাকলেও বর্তমানে কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত।
এমআই