রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

কতটুকু নিরাপদ বেরোবি ক্যাম্পাস?

রোববার, নভেম্বর ১৬, ২০২৫
কতটুকু নিরাপদ বেরোবি ক্যাম্পাস?

ইবতেশাম রহমান সায়নাভ :

সম্প্রতি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক দলগুলো সংঘর্ষ এবং সহিংসতায় ব্যস্ত। ঠিক তখনই প্রশ্ন উঠে, জুলাই অভ্যুত্থানের সুতিকাঘরে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে কতটুকু প্রস্তুত??

সম্প্রতি কিছু ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নিয়ে সংশয় তৈরী হয়। গত ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের আত্মত্যাগ স্মরণে ‘জুলাই শহীদ দিবস’-২০২৫ পালন করার দিন সকালে ক্যাম্পাসের দেয়ালে জয় বাংলা লেখনী দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমান সরকারের ২ জন উপদেষ্টার সেদিন অতিথি হিসেবে ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন বিধায় ক্যাম্পাস নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ছিলো। এ কড়া নিরাপত্তার মাঝেও কে বা কারা দেয়ালে দেয়ালে শেখ হাসিনা ফিরবে লিখে গেলো তা আজও প্রশাসন খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়নি। 

অপরদিকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের ১৩ নভেম্বরের লকডাউনের ঠিক একদিন পূর্বে অর্থাৎ ১২ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শহীদ মুখতার ইলাহী হলে চোর সন্দেহে দুইজন বহিরাগত আটক হোন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা হলের ছাদে লোহা সামগ্রী সংগ্রহ করতে এসেছিলেন। 

এরপর আরেকজন সন্দেজভাজন ব্যক্তি গোপনক্যামেরা, নানা ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং বিপুল অর্থসহ আটক হয়। চশমায় অভিনব গোপন ক্যামেরার মাধ্যমে তিনি শিক্ষার্থীদের ছবি ধারণ করছিলেন বলে অভিযোগ উঠে। 

এছাড়াও সপ্তাহিক ছুটির দিনে প্রায় ২/৩ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ছোট এই ক্যাম্পাসে বৃহৎ পদচারণার ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থেকেই যায় বলে দাবি করছেন বিশ্লেষকেরা।  

এছাড়াও দ্বায়িত্বপালনরত অবস্থায় সহকারী প্রক্টরকে অন্য শিক্ষক দ্বারা লাঞ্চিত হওয়ার মত ঘটনাও বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেছে। এতে নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কতটুকু সংবেদনশীল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তারা। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ মো: রাশেদ খানের সাথে কথা বলে জানতে পারা যায়, পুলিশের এখানে নিজ থেকে কিছু করার এখতিয়ার নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যতক্ষণ পর্যন্ত না কোনো নির্দেশনা দিচ্ছে তাদের নিজ থেকে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে না। তিনি বলেন, “ বিশ্ববিদ্যালয় একটি উম্মুক্ত স্থান। এখানে মানুষের সমাগম ঘটবে এটাই স্বাভাবিক।  কিন্তু নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে কিছুটা ঘাটতি আছে তা সত্য। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রক্টরিয়াল টিম আছে তাদের দিক নির্দেশনার মোতাবেক আমাদের কাজ করতে হয়। আমরা আইনের লোক, আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বিমুখীতার আছে।"

“প্রশাসনের উচিৎ টহল বৃদ্ধি ও অন্ধকার স্থানে আলো দেয়া এবং সম্পূর্ণ বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করা।" বলে যোগ করেন তিনি। 

এ বিষয়ে জানতে নিরাপত্তা শাখার উপ-রেজিস্ট্রার মো: লোকমান হাকিমের সাথে যোগাযোগ হলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হোননি। সম্প্রতি নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা শাখা থেকে তার বদলি হয়ে গেছে বলে জানান তিনি। 

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন বিভাগের সংঘর্ষে প্রশাসনের দুর্বলতা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠে। মার্কেটিং, পদার্থবিজ্ঞান, এবং পরিসংখ্যান বিভাগ খেলার মাঠের তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘাতে জড়ায়। পদার্থবিজ্ঞান ও পরিসংখ্যান বিভাগ একত্রিত হয়ে একাডেমিক-৩ নাম্বার ভবনে হামলা চালায়। সেসময় জানালার কাচ ভেঙ্গে মার্কেটিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী মারাত্মকভাবে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। আঘাত পাওয়া অবস্থায় উক্ত শিক্ষার্থী ৩-৪ ঘন্টা ক্লাসরুমে আটকে থাকে। 

সেসময় প্রশাসন আঘাতপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা বাদ দিয়ে অপরাধীদের শাস্তির উদ্দেশ্যে মিটিং করতে বাধ্য হয়। অপরদিকে আঘাতপ্রাপ্ত নিলয়ের চোখ থেকে অঝোরে রক্ত ঝড়তে থাকে। 

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো: ফেরদৌস রহমান জানান, “ কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে এবং কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে প্রশাসন সর্বদা প্রস্তুত। প্রক্টরিয়াল বডির টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা আরও জোরালো করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা তদারকির ভিতর রাখতে প্রশাসন তৎপর। তবুও দুই একটি ঘটনা ঘটেই যায়, তবে তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রশাসন কখনো পিছপা হয়না।"

উপাচার্য শওকাত আলী বলেন, “ ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা আমরা জোরদার করেছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দিকনির্দেশনা প্রদান করা আছে। প্রক্টরিয়াল বডির টহল আরও বৃদ্ধি, অন্ধকার স্থানে আলো দেয়া সহ আরও প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত শীগ্রই বাস্তবায়ন করা হবে।"  

দেশের সামগ্রিক দিক বিবেচনা জুলাই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রবিন্দু বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও নিরাপদ করতে প্রশাসনের আরও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ। 

ইবতেশাম রহমান সায়নাভ,
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, 
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল