নিজস্ব প্রতিবেদক:
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সব সম্পদ জব্দের নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
তাদের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জমা দেওয়া হলফনামায় ঘোষিত সম্পদই এখন জব্দ করা হবে।
গোপালগঞ্জ-৩ আসনের জন্য দেওয়া হলফনামায় শেখ হাসিনা জানান, তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
তিনি নগদ ২৮ হাজার ৫০০ টাকা এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা জমা থাকার কথা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র এবং ৫৫ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিটের কথাও জানান।
তার হলফনামায় তিনটি মোটরগাড়ির তালিকা রয়েছে। এর মধ্যে দুটির মূল্য ৪৭.৫ লাখ টাকা। তৃতীয়টির মূল্য—যা 'উপহার' হিসেবে দেখানো হয়েছে—উল্লেখ করা হয়নি।
তিনি আরও জানান, তার কাছে ১৩.২৫ লাখ টাকার স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী এবং ৭.৪ লাখ টাকার আসবাবপত্র রয়েছে।
হাসিনা টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ সদর, গাজীপুর এবং রংপুরে মোট ১৫.৩ বিঘা কৃষিজমির মালিকানা দেখিয়েছেন, যার ক্রয়কৃত অংশের মূল্য ৬.৭৮ লাখ টাকা। এছাড়া পূর্বাচলে ৩৪.৭৬ লাখ টাকা মূল্যের একটি প্লট থাকার কথাও উল্লেখ করেছেন।
এর আগে তাকে এবং পরিবারের পাঁচ সদস্যকে পূর্বাচলে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠা জমির প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সেই বরাদ্দে অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে দুদকের একটি তদন্ত এখনো চলমান।
হলফনামায় আরও বলা হয়েছে, টুঙ্গিপাড়ায় তার একটি তিনতলা ভবন এবং ৬.১০ ডেসিমাল জমি রয়েছে, যার অধিগ্রহণকালীন মূল্য ছিল ৫ লাখ টাকা।
দুদক পরে জানায়, তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনী হলফনামায় মাত্র ৬.৫০ একর জমির ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে সংস্থাটির তদন্তে তখন তার নামে ২৮ একরের বেশি স্থাবর সম্পত্তি পাওয়া গেছে।
আসাদুজ্জামান খান কামালের সম্পত্তি
ঢাকা-১২ আসনের জন্য দেওয়া হলফনামায় আসাদুজ্জামান খান কামাল তার সম্পদের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি জানান, তার নগদ ৮৪ লাখ টাকা এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত প্রায় ৮২ লাখ টাকা রয়েছে।
তিনি প্রায় ২৪ লাখ টাকার বন্ড ও শেয়ার এবং ২.১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ও ফিক্সড ডিপোজিটের কথাও উল্লেখ করেছেন। এছাড়া, তিনি ১.৬১ কোটি টাকা মূল্যের দুটি মোটরগাড়ির মালিকানার তথ্য দিয়েছেন। তার ইলেকট্রনিক্স ও আসবাবপত্রের মূল্য ২ লাখ টাকা।
কামাল ঋণের অধীনে নথিভুক্ত ব্যবসায়িক মূলধন হিসেবে ২.২ কোটি টাকা দেখিয়েছেন। তিনি ১০ ভরি স্বর্ণ থাকার কথা জানিয়েছেন, তবে এর কোনো মূল্য উল্লেখ করেননি।
তিনি ১৭১ ডেসিমাল (প্রায় ৫ বিঘার বেশি) কৃষিজমি এবং ১৮.৫ ডেসিমাল অকৃষিজমির মালিকানা দেখিয়েছেন। কৃষিজমির অধিগ্রহণকালীন মূল্য ছিল ১.৬ কোটি টাকা, আর অকৃষিজমির মূল্য ৫৮.৫ লাখ টাকা।
দুটি বাড়ির তথ্যও তিনি দিয়েছেন। একটি গ্রামের সম্পত্তি যার মূল্য ৮০ লাখ টাকা এবং অন্যটি শহরের, যার মূল্য প্রায় ১৩ লাখ টাকা।
স্বর্ণের মূল্য বাদ দিয়ে তার মোট ঘোষিত সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১০.২৫ কোটি টাকা। দুদক জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ থাকার অভিযোগ রয়েছে। সংস্থাটি অভিযোগ করেছে, তিনি অবৈধ উপায়ে ১৬.৪২ কোটি টাকা সঞ্চয় করেছেন।
এমআই