বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

লক্ষ্মীপুরে বিএনপি কর্মী খুন: ১২ ঘণ্টার মধ্যে যুবদল কর্মী ইউসুফ গ্রেপ্তার

বুধবার, নভেম্বর ২৬, ২০২৫
লক্ষ্মীপুরে বিএনপি কর্মী খুন: ১২ ঘণ্টার মধ্যে যুবদল কর্মী ইউসুফ গ্রেপ্তার

অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি  :

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে চাঁদাবাজি–সংক্রান্ত বিরোধের জেরে বিএনপি কর্মী আনোয়ার হোসেন হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত যুবদল কর্মী মো. ইউসুফ আলীকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। ঘটনার মাত্র ১২ ঘণ্টার মাথায় বুধবার ভোররাতে ঢাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। র‍্যাব–১১, নোয়াখালী ক্যাম্পের সদস্যরা এ অভিযান পরিচালনা করে।

রামগঞ্জ উপজেলার একটি দোকানে মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে আনোয়ার হোসেনকে তার দোকানের সামনে হামলার মুখে পড়তে হয়। পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি, চাঁদা দাবির জেরে এই ঘটনা ঘটে। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, ইউসুফ আলী এবং তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরেই দুই লাখ টাকা দাবি করে আসছিল। আনোয়ারের শ্যালক বিদেশ যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঋণ পাওয়ার পরপরই চাঁদাবাজরা চাপ বাড়ায়। এই দাবি পূরণ না করায় উত্তেজনা তৈরি হয়ে ওঠে, যা শেষ পর্যন্ত হত্যায় রূপ নেয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

ঘটনার পরপরই ইউসুফ আলী পলাতক হয়ে ঢাকা চলে যান। র‍্যাব বিষয়টি নজরে এনে বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করে। অবশেষে বুধবার ভোরে রাজধানীর একটি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। দুপুরে লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন র‍্যাব-১১, নোয়াখালী ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক মিঠুন কুমার কুন্ডু।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “ঘটনার পর দ্রুত অভিযানে নেমে আমরা প্রথমে ঘটনাস্থল থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করি। পরবর্তী সময়ে প্রযুক্তির সহায়তায় ইউসুফ আলীর অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হয়। অবশেষে বুধবার ভোরের দিকে তাকে ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সহযোগীদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”

তিনি আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইউসুফ আলী ঘটনার বিষয়ে কিছু তথ্য দিয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই সেসব প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে র‍্যাব নিশ্চিত যে এই হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত ছিল এবং চাঁদা আদায়ের চাপের মধ্যেই বিরোধের সূত্র ধরে ঘটেছে।

নিহত আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী ফারজানা আক্তার সাথী বুধবার সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার আগের দিন থেকেই তাদের দোকানে গিয়ে ইউসুফ আলীর লোকজন হুমকি দিচ্ছিল। তিনি বলেন, “আমরা সাধারণ মানুষ। স্বামী দিনরাত পরিশ্রম করে দোকান চালাতেন। শ্যালককে বিদেশ পাঠাতে ঋণ নিয়েছিলাম—এটা নিয়েই ওরা দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করতে থাকে। আমরা দিতে পারিনি বলেই আমার স্বামীকে প্রাণ দিতে হলো।”

স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও জানান। তার ভাষায়, “যাদের ধরে নিয়ে গেছে, তারা তো সব হয়নি। কতজন বাইরে আছে! আমরা এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন সবাইকে দ্রুত ধরে সঠিক বিচার নিশ্চিত করে—এই দাবি করি।”

ঘটনার পর এলাকা জুড়ে শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এলাকায় চাঁদাবাজি, ক্ষমতার দাপট এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে। অনেকেই অভিযোগ করেন, বিভিন্ন দলীয় অঙ্গসংগঠনের কয়েকজন নেতা–কর্মী প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। স্থানীয়রা মনে করেন, এমন ঘটনার যথাযথ বিচার না হওয়ায় অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

একাধিক স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাও এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান। তারা বলেন, রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে কেউ যেন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াতে না পারে, সেদিকে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। দলীয় পরিচয় অপরাধীকে রক্ষা করার ঢাল হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তারা।

এদিকে, রামগঞ্জ থানার ওসি জানান, নিহত আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী ফারজানা আক্তারের দায়ের করা মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে কিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে, যা তদন্তে সহায়ক হবে। তিনি বলেন, “মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের অভিযান চলছে। দ্রুতই সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।”

এ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দোকানপাট ও বাজার এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে যাতে কোনো ধরনের উত্তেজনা তৈরি না হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর রামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে দোকান বন্ধ রেখে ঘরে ফিরে যায়।

এদিকে, নিহত আনোয়ার হোসেন স্থানীয়ভাবে একজন শান্ত স্বভাবের মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এলাকার লোকজন জানান, তিনি ব্যবসা ছাড়া কখনো কোনো রাজনৈতিক বা দ্বন্দ্বমূলক কাজে জড়িত ছিলেন না। স্থানীয়দের ভাষায়, “ওর মতো মানুষকে যারা হত্যা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।”

র‍্যাব–১১ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত ইউসুফ আলীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রামগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হবে। এরপর তাকে আদালতে হাজির করা হবে এবং রিমান্ড আবেদন করা হবে কিনা, সে বিষয়ে পুলিশ সিদ্ধান্ত নেবে।

ঘটনার তদন্ত চলমান রয়েছে। র‍্যাব ও পুলিশ যৌথভাবে কাজ করে পুরো ঘটনার পেছনের কারণ, পরিকল্পনা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা যাচাই করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, “এই হত্যাকাণ্ডকে কোনোভাবেই সাধারণ অপরাধ হিসেবে দেখা হচ্ছে না। এটি একটি সংগঠিত অপরাধ। তাই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।”

স্থানীয়রা আশা করছেন, দ্রুতই মামলার সব আসামিকে গ্রেপ্তার করে হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার নিশ্চিত করা হবে। আনোয়ার হোসেনের পরিবারও একই দাবি জানিয়েছেন।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল