নিজস্ব প্রতিবেদক: উইমেন এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ওয়েব) উদ্যোগে আয়োজিত হলো বাংলাদেশের জননীতিতে জলবায়ু কর্মকাণ্ড, নারী উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে দিনব্যাপী সেমিনার। বিকেলে সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনব্যাপী আয়োজনের সমাপ্তি ঘটে।
শনিবার (০৬ ডিসেম্বর) গুলশানের লেকশোর হোটেলে 'ভয়েসেস ফর চেঞ্জ: পুটিং ক্লাইমেট অ্যাকশন, ওমেন এন্ট্রেপ্রেনিউরস, এন্ড এসএমই ইন বাংলাদেশ’স পাবলিক পলিসি'-শীর্ষক অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। সভাপতিত্ব করেন ওয়েব সভাপতি নাসরীন ফাতেমা আউয়াল। বিশেষ অতিথি ছিলেন আবদুন নাসের খান, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল পিএলসি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এখানে এসেছি একজন নারী হিসেবে। উদ্যোক্তার দিক থেকে দেখলে প্রতিটা নারীই উদ্যোক্তা। সেটা মার্কেট রিলেটেড হোক বা না হোক। ক্রাইসেস ম্যানেজমেন্টের কথা যদি চিন্তা করেন প্রত্যন্ত অঞ্চলে একজন নারীকে যেভাবে তার পরিবারটিকে আগলে রাখতে হয় তাকে ক্রিয়েটিভ হতে হয়।
তিনি বলেন, বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখলে অবাক লাগে কিভাবে নারীরা তাদের তৈরি পণ্য নিয়ে সবার সামনে আসছে। এবং তাদের অনেককে ট্রলের স্বীকার হতে হয়েছে। আমি পরিবেশ নিয়ে ৩১ বছর কাজ করি। যখন উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়েছি আমাকেও ট্রলের স্বীকার হতে হয়েছে নারী বলে।
বক্তব্যে রিজওয়ানা হাসান বলেন, এই সমাজ কখনো মেনে নিবেনা নারীকে তার ইচ্ছেমত চলতে দিবেনা। সামাজিক একটা কাঠামো থাকে যখন মধ্যে চলবে তখন কোন কারণই নেই সেখানে বাঁধা দেয়ার। আর যদি বাঁধা আসে নারীসহ সমাজের প্রগতিশীল চিন্তাভাবনার মানুষকে নিয়ে রাষ্ট্রের সহায়তায় তা প্রতিহত করা হবে।
এসময় ওয়েব সভাপতি নাসরীন ফাতেমা আউয়াল বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হলো আমাদের স্লোগানকে বাস্তব শক্তিতে রূপ দেওয়া। আমরা চাই, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা, নারী উদ্যোক্তা তৈরির গতি বাড়ানো এবং ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তাদের জাতীয় নীতি-আলোচনায় আরও প্রাধান্য দেওয়া।জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নারীদের ভূমিকা তুলে ধরা, নারী উদ্যোক্তাদের সমস্যা–সমাধান জননীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা, এবং বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাগুলোকে (এসএমইস) আরও শক্তিশালী করা।কারণ আমরা বিশ্বাস করি—নারী উন্নয়ন ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।
ওয়েব সবসময়ই নারীদের পাশে ছিল এবং থাকবে—প্রশিক্ষণ, বাজার-সংযোগ, পরামর্শ এবং সহযোগিতার মাধ্যমে। আমাদের লক্ষ্য হলো যেন প্রতিটি নারী নিজেকে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর করে তুলতে পারেন।
দিনব্যাপী এই উচ্চপর্যায়ের সেমিনারে নীতি নির্ধারক, বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, জলবায়ু বিশেষজ্ঞ এবং নারী উদ্যোক্তারা অংশগ্রহণ করবেন। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ, এসএমই খাতের শক্তি বৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়ন নিয়ে কার্যকর দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হয়।
দুইটি টেকনিক্যাল সেশনে উপস্থিত ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, মিসেস সারা হোসেন, সিনিয়র এডভোকেট, সুপ্রিম কোর্ট, আবদুল হাই সরকার, চেয়ারম্যান, ঢাকা ব্যাংক, মাহিউল কাদির, কান্ট্রি ডিরেক্টর ফর বেটার উইথ ওয়াটার ইন বাংলাদেশ, শেখ মুহাম্মদ মেহেদি আহসান, জেনারেল সেক্রেটারি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্লানার্স, ফারাহ কবির, কান্ট্রি ডিরেক্টর অ্যাকশন এইড, বাংলাদেশ, হুরায়রা জাবীন, কনসালটেন্ট, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এবং হাসনা জসিমউদদীন মউদুদ, আইইউসিএন কাউন্সিলর, সাউথ এন্ড ইস্ট এশিয়া।
এরআগে সকাল ১০ টায় উদ্বোধনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। অনুষ্ঠানে উদ্ভোদনী বক্তব্য প্রদান করেন ওয়েব সভাপতি নাসরীন ফাতেমা আউয়াল, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফারিদা আখতার, উপদেষ্টা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাইবা জারিনা, ডেপুটি হেড, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেট বাংলাদেশ, মোঃ মুশফিকুর রহমান, চেয়ারপারসন, এসএমই ফাউন্ডেশন, মীর নাসির হোসাইন, সাবেক সভাপতি এফবিসিসিআই এবং মো. রফিকুল ইসলাম, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, বাংলাদেশ ব্যাংক।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফারিদা আখতার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অতিরিক্ত তহবিল গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, ভূমিকম্প একবার হলে আবার ৫০ বছরে হবেনা কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন বড় সমস্যা।
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি নীতিনির্ধারকদের পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরির আহবান জানান।
এমআই