কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি:
ঢাকার কেরানীগঞ্জের আগানগর বাবুবাজারে জাবালে নুর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। গতকাল শনিবার ভোর ৫টা ৩৭ মিনিটে এ আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিটের ১১ ঘণ্টার চেষ্টায় তা নিয়ন্ত্রণে আসে। ১০ তলা ভবনের বেজমেন্টের গুদাম থেকে আগুন ছড়িয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। আগুন লাগার পরপরই ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয়তলার মার্কেটের মালিক জাতীয় পার্টি নেতা হাজি ফারুক হোসেন আত্মগোপনে চলে যান। তাঁর বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। পরে সব মিলিয়ে ১৪টি ইউনিট সকাল থেকে কাজ শুরু করে। দুপুরের দিকে ফায়ার সার্ভিস হেডকোয়ার্টার থেকে আরও ছয়টি পাঠানো হয়। ২০টি ইউনিটের ১৬১ কর্মী আগুন নেভাতে কাজ করেন।
তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জাবালে নুর টাওয়ার থেকে ৪৫ জনকে উদ্ধার করেছে। লিফট ও সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় হুড়াহুড়ি করে কয়েকজন আহত হয়েছেন। আগুন লাগার পর থেকে মার্কেটের মালিক জাতীয় পার্টির নেতা হাজি ফারুক হোসেন আত্মগোপনে। প্রশাসনকে মালিক ফারুক হোসেন ও তাঁর লোকজন কোনোভাবে সহযোগিতা না করায় ক্ষুব্ধ হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আগুন লাগার পর থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সহযোগিতা করেছেন। ১১ ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। মালিকপক্ষ কোনোভাবে সহযোগিতা করেনি। আগুন কীভাবে লেগেছে, তা তদন্ত কমিটি জানাবে। ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। লোকজন বসবাসের উপযোগী নয়।
আগানগর এলাকার বাসিন্দা সুমন মিয়া বলেন, ১০ তলা ভবনের বেজমেন্টে শীতের পোশাক ও পাটের পণ্য ছিল। আগে এ নিয়ে বিভিন্ন ফ্ল্যাটের মালিকরা ভবন মালিক ফারুক হোসেনের সঙ্গে বসলেও সুরাহা হয়নি। আগুন লাগার ঘটনা পরিকল্পিতও হতে পারে। জাবালে নুরের মালিক হাজি ফারুক হোসেন ঢাকা-৩ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী।
চারতলায় তিনটি ফ্ল্যাটের মালিক মো. নোমান উদ্দিন বলেন, ভবনে সব মিলিয়ে ৩৫০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। খুব ভোরে আগুন লাগে। আগুনের সূত্রপাত হয় মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে। ওই আন্ডারগ্রাউন্ড ও দ্বিতীয় তলায় মার্কেট। তিন থেকে অষ্টম তলা পর্যন্ত বাসাবাড়ি। কোনো বাসাবাড়ির নিচে গুদাম থাকতে পারে না।
গার্মেন্ট পল্লির শ্রমিক মিরাজ হোসেন বলেন, ফায়ার সেফটি নেই। বাসাবাড়িতে শত শত লোকজন থাকেন। এসব ভবনে পাটপণ্য রাখা উচিত নয়। এ আগুন পরিকল্পিতও হতে পারে। তিনি বলেন, জাবালে নুর মার্কেটের জমি নিয়েও বিরোধ ছিল। জাতীয় পার্টির নেতা ফারুক হোসেন এ ঘটনা ঘটাতে পারেন।
মার্কেটের জুট ব্যবসায়ী মো. রানা বলেন, সকাল ৯টা থেকে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের সঙ্গে কাজ করেছি। পাঁচ ঘণ্টা ভেতরে ছিলাম। কালো ধোঁয়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। আগুনের খবর পেয়েও কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কেউ ঘটনাস্থলে আসেননি।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. উমর ফারুক বলেন, আগুনের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মো. সাইফুল আলম জানান, পুলিশ সহযোগিতা করেছে। আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি।
ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার সেল তালহা বিন জসিম জানান, ১১ ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় গোডাউন থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণ কষ্ট হয়েছে।
একে