সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫

শীতের দাপটে জবুথবু রাজধানী

সোমবার, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৫
শীতের দাপটে জবুথবু রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ভোরের ঢাকা এখন আর চেনা শহর নয়। কুয়াশার ঘন পর্দা ভেদ করে ধীরে ধীরে জেগে ওঠে রাস্তাঘাট, ঠান্ডা বাতাসে কাঁপতে থাকে গাছের পাতা আর মানুষ। বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা শ্রমজীবীর জমে যাওয়া হাত, ফুটপাতে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকা ছিন্নমূল মানুষের চোখে জমে থাকা ক্লান্তি—সব মিলিয়ে শীতের দাপটে জবুথবু এক নগরীর নীরব গল্প শোনা যায়। 

কনকনে ঠান্ডা আর কুয়াশায় ঢাকার ব্যস্ততা থমকে গেছে, শহর যেন শীতের সঙ্গে এক নিঃশব্দ লড়াইয়ে নেমেছে। রাতের ঠান্ডা বাতাস আর ভোরের ঘন কুয়াশা মিলিয়ে দিনের বড় একটা সময়ই কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। 

ঢাকায় গত কয়েক দিন ধরে ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকছে চারপাশ। সকালবেলায় দৃষ্টিসীমা কমে যাওয়ায় সড়কে যান চলাচল ধীরগতির হয়ে পড়ছে। অফিসগামী মানুষ, শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবীরা শীতের সঙ্গে কুয়াশাজনিত ভোগান্তিতে পড়ছেন। বিশেষ করে রিকশাচালক, দিনমজুর, নির্মাণশ্রমিক ও পথচারীদের কষ্ট বেড়েছে কয়েকগুণ। অনেকেই প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে কাঁপতে কাঁপতে কাজে বের হচ্ছেন। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে, ফলে শীতজনিত ভোগান্তিও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রোববার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে হাওর–অধ্যুষিত কিশোরগঞ্জের নিকলীতে—৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া উত্তরের জেলা সিরাজগঞ্জের তাড়াশে তাপমাত্রা নেমেছে ১১ ডিগ্রিতে, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১১ দশমিক ৩, কুমিল্লা ও যশোরে ১১ দশমিক ৫, পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও নীলফামারীর ডিমলায় ১২, কুষ্টিয়ার কুমারখালী ও নওগাঁর বদলগাছীতে ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা নগরবাসীর জন্যও তীব্র শীতের অনুভূতি তৈরি করেছে।

ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাসের কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। দেশের অনেক এলাকায় সকালবেলায় সড়ক, নৌ ও আকাশপথে যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটছে। নৌপথে লঞ্চ ও ফেরি চলাচল ধীর হয়ে পড়েছে, কোথাও কোথাও সাময়িকভাবে বন্ধও রাখা হচ্ছে। 

বিমানবন্দরগুলোতেও কুয়াশার কারণে ফ্লাইট শিডিউলে বিঘ্ন দেখা দিচ্ছে। হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, দৃষ্টিসীমা কমে যাওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে, তাই চালকদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

শীতের এই তীব্রতায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। ফুটপাত, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড ও খোলা জায়গায় বসবাসকারী ছিন্নমূল মানুষদের জন্য শীত এখন বড় এক সংকট। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় শিশু ও বয়স্করা অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। বিভিন্ন এলাকায় শীতজনিত রোগ—সর্দি, কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর শৈত্যপ্রবাহের সংজ্ঞা অনুযায়ী জানিয়েছে, বড় এলাকাজুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাঝারি এবং ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। বর্তমানে দেশের কিছু অংশে মৃদু থেকে হালকা শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে রাতের তাপমাত্রা আরও ১ থেকে ২ ডিগ্রি কমলে পরিস্থিতি মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিতে পারে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত কুয়াশার দাপট বেশি থাকছে। নদী অববাহিকা ও নিম্নাঞ্চলে কুয়াশার ঘনত্ব তুলনামূলক বেশি, যার প্রভাব পড়ছে নৌযানে চলাচলে। আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানার সই করা বুলেটিনে বলা হয়েছে, সোমবার রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। মঙ্গলবার রাতে তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে, তবে দিনের তাপমাত্রা খুব একটা বদলাবে না। বুধবার বছরের শেষ দিনে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা কমে শীতের অনুভূতি আরও বাড়তে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির শুরু পর্যন্ত শীতের তীব্রতা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জানুয়ারিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যেতে পারে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চল, হাওর এলাকা ও নদী তীরবর্তী অঞ্চলে শীতের প্রকোপ বেশি হতে পারে। এতে দরিদ্র ও খোলা আকাশের নিচে বসবাসকারী মানুষের জন্য ঝুঁকি আরও বাড়বে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা শীতজনিত ঝুঁকি এড়াতে শিশু ও বয়স্কদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। শীতে পর্যাপ্ত গরম কাপড় ব্যবহার, ভোরে অপ্রয়োজনে বাইরে না যাওয়া এবং গরম খাবার গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে শ্বাসকষ্ট বা জ্বর দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে নতুন বছরের শুরুতে তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কুয়াশা পুরোপুরি কাটতে সময় লাগতে পারে। বিআইডব্লিউটিএ ও হাইওয়ে পুলিশ কুয়াশার মধ্যে চলাচলের সময় হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলার নির্দেশনা দিয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনকে শীতবস্ত্র বিতরণ ও শীতকালীন প্রস্তুতি জোরদারের আহ্বান জানানো হয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে শীতের ধরন বদলে যাচ্ছে। কখনো স্বল্প সময়ের মধ্যে তীব্র ঠান্ডা, আবার কখনো দীর্ঘ সময় ধরে কুয়াশাচ্ছন্ন ও শুষ্ক আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আগাম প্রস্তুতি ও সচেতনতা জরুরি। শীতের এই হাড়কাঁপানো সময়ে জনজীবনকে স্বাভাবিক রাখতে এবং ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের সুরক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল