শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ন্যূনতম আয়কর দুই হাজার টাকা, বিপাকে বয়স্ক নারী-পুরুষ

বৃহস্পতিবার, জুন ৮, ২০২৩
ন্যূনতম আয়কর দুই হাজার টাকা, বিপাকে বয়স্ক নারী-পুরুষ

লাবিন রহমান:

মোমেনা আক্তার। স্বামী মারা গেছে সাত বছর হতে চলছে। এখন বয়স ৭০এর কাছাকাছি। স্বামী বেঁচে থাকতে টিন সার্টিফিকেট করিয়েছিলেন কাজের প্রয়োজনে। স্বামী মারা যাওয়ার পর প্রতি বছর ৫০০টাকা দিয়ে টিনটা চালু রেখেছিলেন।  মোমেনা আক্তারের নামে রেখে যাওয়া সামান্য জমি, এফডিআরসহ ভাংগা বা নতুন কেনার জন্য। 

নতুন বাজেটে রিটার্ন দাখিল করলেই দুই হাজার টাকা কর দেয়ার প্রস্তাবনা করা হয়েছে। এটা জনার পর মোমেনা আক্তারের মতো আরো অনেকেই পড়েছেন বিপাকে। এ নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।

বাজেটে বলা হয়েছে, আয় না থাকলেও একজন টিআইএনধারী ব্যক্তিকে আয়কর সনদ নিতে হলে দুই হাজার টাকা ন্যূনতম আয়কর দিতে হবে। ৪৪ ধরনের সেবা নিতে হলে এই আয়কর সনদ জমা দিতে হবে।

এদিকে, অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির কারণে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এমনিতেই চাপের মধ্যে রয়েছে। আয়কর দেয়া নিয়ে তাদের মধ্যে এখনো ভীতিও রয়েছে। সেখানে আয়কর রিটার্ন দাখিলে দুই হাজার টাকা দিতে বাধ্য করা হলে সেটা অনেককে কর দেয়া থেকে অনুৎসাহিত করে তুলতে পারে।

নতুন অর্থবছরে এরকম সেবার তালিকা বাড়িয়ে ৪৪টি করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা আশা করছেন, এর ফলে যারা এসব সেবা নিয়ে আসছেন, কিন্তু কর দেন না, তাদের কাছ থেকে রাজস্ব পাওয়া যাবে।

বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য ন্যূনতম কর পাঁচ হাজার, অন্যান্য সিটি করপোরশন এলাকায় বসবাসরত ব্যক্তিদের জন্য ন্যূনতম চার হাজার এবং সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে বসবাসরত ব্যক্তি শ্রেনীর করদাতাদের জন্য ন্যূনতম তিন হাজার টাকা করের বিধান আছে। এ বিধানটি অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে।

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, কর শনাক্তকরণ নম্বর থাকলে তাকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। রিটার্ন দাখিল না করলে সাজা বা জরিমানার বিধান রয়েছে। যদিও বাংলাদেশের মোট টিআইএন নম্বরধারীর দুই-তৃতীয়াংশই এখনো রিটার্ন দাখিল করেন না।

একবার রিটার্ন দাখিল করার পর থেকে কোনো বছর রিটার্ন জমা না দেয়া হলে জরিমানা হবে।

কিন্তু কারো যদি দুই হাজার টাকা আয়কর দেয়ার মতো সামর্থ্য না থাকে, তিনি আর করের আওতায় যদি থাকতে না চান, তিনি তাহলে কী করতে পারেন?

এক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, কারো করযোগ্য আয় না থাকলে বা আয় কর আরোপযোগ্য সীমার নিচে নেমে গেলে টিআইএন স্থগিত বা বাতিল করার সুযোগ রয়েছে।

সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সার্কেলের উপ-কর কমিশনারের বরাবর টিআইএন বাতিলের জন্য কারণ ব্যাখ্যা করে আবেদন করা যেতে পারে। উপ-কর কমিশনার এই বিষয়ে তদন্ত বা শুনানি করে অথবা আবেদনের ওপর ভিত্তি করেই টিআইএন এর কার্যক্রম স্থগিত বা বাতিল করতে পারেন।

টিআইএন নম্বর থাকলেও ২০২৩ অর্থবছর থেকে ৪৪ ধরনের সেবায় আয়কর প্রাপ্তিস্বীকার পত্র জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যারা এসব সেবা নিতে চাইবেন, তাদের অবশ্যই রিটার্ন দাখিল করতে হবে।

এসব সেবার মধ্যে রয়েছে :
* পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র বা পোস্টাল সেভিংস কেনা
* ব্যাংক থেকে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ঋণ নেয়া
* রিটার্নে প্রাপ্তিস্বীকার পত্র না থাকলে ব্যাংকে জমা টাকার সুদ থেকে উৎসে কর ১৫ শতাংশ কাটা হবে, প্রাপ্তিস্বীকার পত্র থাকলে ১০ শতাংশ কাটা হবে।
* সিটি কর্পোরেশন বা জেলা সদরের পৌর এলাকা অথবা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ১০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের জমি, ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রি, বিক্রি বা হস্তান্তর করতে হলে
* ক্রেডিট কার্ড নিতে হলে
* গাড়ি ক্রয়, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়ন করতে
* সিটি কর্পোরেশন, জেলা সদর বা পৌরসভায় সন্তানদের ইংলিশ মিডিয়াম বা ইংরেজি ভার্সনে ভর্তি করাতে
* বাণিজ্যিক বা শিল্প কলকারখানায় গ্যাসের সংযোগ নিতে, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আবাসিক গ্যাসের সংযোগ নিতে বা বহাল রাখতে
সিটি কর্পোরেশন বা সেনানিবাস এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে
* জমি বা বাড়ি ভাড়া দিয়ে আয়
সরকারি, আধাসরকারি, কর্পোরেশন থেকে মূল বেতন ১৬ হাজার টাকার বেশি হলে
* বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বেতন নিতে হলে
* শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আয় ১৬ হাজার টাকার বেশি হলে
* মহানগরে ভবন নির্মাণের অনুমোদন চাইলে
* জাতীয় সংসদ, সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা বা উপজেলায় প্রার্থী হলে
* পেনশন ফান্ড,অনুমোদিত গ্র্যাচুইটি ফান্ড, স্বীকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড, অনুমোদিত সুপারএন্যুয়েশন ফান্ড এবং শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ছাড়া অন্যান্য ফান্ডের ক্ষেত্রে
* ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়ন করতে হলে
* ডিজিটাল প্লাটফর্মে কোন পণ্য বা সেবা বিক্রি করতে হলে
* মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ হস্তান্তর, কমিশন বা ফি প্রাপ্তি
* সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের আওতায় সমিতি বা ক্লাব গঠন ও সদস্য হলে
* ডাক্তার, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি ইত্যাদি পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য হলে
* পরামর্শক, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, ক্যাটারিং, জনবল বা নিরাপত্তা সেবা দিয়ে অর্থ গ্রহণ করলে
* বিবাহ নিবন্ধক বা কাজী হিসেবে লাইসেন্স পেতে চাইলে
* আমদানি-রফতানির সনদ, আমদানির এলসি খুলতে চাইলে
* কোম্পানি পরিচালক বা শেয়ার হোল্ডার পদ পেতে
* ব্যবসা বাণিজ্য বা বণিজ সমিতির সদস্যপদ নিতে চাইলে
* বীমা বা সার্ভেয়ার হিসাবে নিবন্ধন নিতে চাইলে
* অস্ত্রের লাইসেন্স নেয়ার ক্ষেত্রে
* ওষুধ ব্যবসার জন্য ড্রাগ লাইসেন্স করাতে
* পরিবেশ ছাড়পত্র বা বিএসটিআই ছাড়পত্র পেতে
* লঞ্চ, স্টিমার, ট্রলার বা কার্গো ইত্যাদির সার্ভে সার্টিফিকেটের জন্য
* ইটভাটার অনুমোদন নিতে হলে বা পরিবহণ ব্যবসা করলে
* কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটর বা এজেন্টশিপ চাইলে
* পণ্য সরবরাহের ঠিকাদারি কাজে টেন্ডার জমা দিলে
* এনজিও বা ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার জন্য বিদেশি অনুদানের ক্ষেত্রে
* স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি ও কার্স্ট্রিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে নিবন্ধন ও লাইসেন্স নিতে চাইলে বা বহাল রাখতে
* সমবায় সমিতি, ট্রাস্ট বা এনজিও ব্যাংক হিসাব খুলতে
* সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ভূমি, ভবন এবং অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া বা লিজ রেজিস্ট্রেশন
* পৌরসভা এলাকায় ১০ লাখ টাকা মূল্যের জমি বিক্রয়, হস্তান্তর
* সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাড়ি ভাড়া বা লিজ নেয়ার ক্ষেত্রে বাড়ির মালিকের
* কিছু প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পণ্য সরবরাহ এবং সেবা প্রদান করতে হলে সরবরাহকারীর।

সময় জার্নাল/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল