বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

যখন বলি পরীক্ষা নিব তখন তারা অবাক হয়

বৃহস্পতিবার, মে ২৭, ২০২১
যখন বলি পরীক্ষা নিব তখন তারা অবাক হয়

রিমা সুলতানা: হঠাৎ কেন জানি মনে হলো একটি দেশের মেরুদণ্ড আস্তে আস্তে ভেঙে পড়ছে। আমার তখন একটা কথা মনে পড়লো। কোনো এক বিখ্যাত ব্যাক্তি বলেছিলেন, যদি কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে চাও তাহলে শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে, রাজনীতি আর অসৎ ব্যাক্তিদের প্রবেশ ঘটাও। 

গতবছর ৮ই মার্চ আমাদের দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগী ধরা পড়ে আর ১৭ই মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে পড়ে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেই থেকে এই পর্যন্ত প্রায় ১৫মাস আমাদের প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধই রয়ে গেল। আমি বা আমরা কেউই জানিনা এই বন্ধটা আর কত দীর্ঘায়িত হবে।

আচ্ছা, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী আপনারা কার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন? কোন উদ্দেশ্য কে কেন্দ্র করে দীর্ঘায়িত হচ্ছে এই বন্ধ? মাননীয় মন্ত্রী যাদের জন্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন তারা কি আদৌও ঘরে বসে আছে? আমি তো মনে করি একদমই না। কারন সেসব শিক্ষার্থীরাই অভিভাবকের সাথে আজ এখানে, কাল ওখানে ঘুরতে যাচ্ছে, বেড়াতে যাচ্ছে। তা শিশু হোক কিংবা অর্নাস মাস্টার্স পড়ুয়া হোক।

মাননীয় মন্ত্রী আমি যখন টিউশনিতে গিয়ে বাচ্চাদেরকে পড়াই তখন তারা অনীহা প্রকাশ করে। আর যখন বলি পরীক্ষা নিব তখন তারা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, তারা পরীক্ষা নামক শব্দটা ভুলে যাচ্ছে, আর পরীক্ষার মতো প্রক্রিয়াগুলোও ভুলতে বসেছে। তারা অনলাইনে ক্লাস আর দেখে দেখে এসাইনমেন্ট লিখে তাদের না হচ্ছে প্রতিভার বিকাশ, আর না হচ্ছে তাদের মেধার বিকাশ। তারা দিন দিন নিজেদের কে এক অন্ধকার জগতে প্রবেশ করাচ্ছে, আর এতে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হচ্ছে শিশু শ্রেণি থেকে শুরু করে মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে। তার ওপর অনলাইন ক্লাসের উচিলায় তারা এখন মোবাইলে এত বেশি আসক্ত হচ্ছে যে তাদের বাস্তব জীবন তারা ভুলতে বসেছে। 

মাননীয় মন্ত্রী একটি জাতি কিংবা দেশের জন্য বিষয় টা কতটা মারাত্মক প্রভাব ফেলছে তা হয়তো অদূর ভবিষ্যতে আমরা বুজতে পারবো। এই দায়ভার কে নিবে মাননীয় মন্ত্রী, আমি?আপনি? পরিবার? সমাজ? নাকি রাষ্ট্র?

করোনা আর লকডাউন এই ইস্যু কে ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত আমাদের যে সময়গুলো নষ্ট করা হচ্ছে এতে একটা প্লে ক্লাসের বাচ্চা থেকে শুরু করে একজন চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া শিক্ষার্থীর জীবনও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

মাননীয় মন্ত্রী একজন গার্মেন্টস কর্মী বা লোকাল বাসের কর্মীদের চেয়েও কি আমরা শিক্ষথীরা অসচেতন? একজন গার্মেন্টস কর্মী যদি সচেতন হয়ে তার কর্মস্থলে যেতে পারে বা লোকাল বাসে যদি একসিট খালি রেখে বাস চলতে পারে তাহলে আমরা শিক্ষাথীরা সচেতন হয়ে কি আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারব না। আপনারাইতো বলেন আমরা নাকি একটি জাতির কর্ণধার, তাহলে সেই কর্নধারদেরকে এভাবে কেন ভেঙে দেওয়া হচ্ছে? মাননীয় মন্ত্রী আপনাকে একটা কথা মনে করিয়ে দি, আমরা শিক্ষার্থী, আর আমরা সবচেয়ে সচেতন থাকবো, সচেতনতা বাড়াবো আমরাই, কেননা সচেতনতা শুরু হবে আমাদের হাত ধরেই, আর আমরাই পারবো একটি দেশ কিংবা জাতিকে মহামারির মত বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে, আমাদের থেকে অন্তত বেশি সচেতন আর কেউ হবেও না, আর আমরা যদি সচেতন থেকে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারি তাহলে এটিই হবে এই মহামারীর সময় এক অন্যতম চ্যালেন্জ।
 
মাননীয় মন্ত্রী আমাদের মত মধ্যবিত্ত, নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা যখন গ্রাজুয়েশন শেষ করার অন্তিম পর্বে কিন্তুু শেষ করতে পারছে না। বেকারত্বের মত এই রকম অভিশাপের তকমা নিয়ে দিনযাপন করছে, এর সমাধান কবে হবে? বিষয়টা আপনাদের মাথায় রাখা উচিত।

মাননীয় মন্ত্রী, আমি মনে করি আপনি একজন রাজনৈতিক নেত্রী হিসাবে আপনার মাঝে অনেকক সুপ্তগুণ কিংবা বিশেষ কিছু গুনাবলির অধিকারী। আর এই গুণ এবং মানবিক দৃষ্টিতে চাইলে আমাদেরকে এই ধ্বংসের  হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন। আমাদের জীবনটা সাবলীল করতে পারেন, ইতিমধ্যে  আমরা জীবন থেকে ১৪ মাস হারিয়ে ফেলছি, এত দীর্ঘায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম হলো, তাই আমাদের এই বন্ধ আর দীর্ঘায়িত করবেন না।

মাননীয় মন্ত্রী আমাদের এই ক্ষতি কেউ কখনো পুষিয়ে দিতে পারবে না, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়ও সেই রকম সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। করোনা নিয়ে আমাদের আগামী দিনগুলো পার করতে হবে। তাই আকুল আবেদন আপনার কাছে আবারও যথোপযুক্ত  ভাবে ভেবে; আমাদের সময়গুলো আর নষ্ট না করে, আমাদের শিক্ষাখাত আর একটি জাতিকে যেন ধ্বংস ন করে, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।এটাই সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার, আর কোনো ধরনের অজুহাত দিবেন না।
কেননা, 'শিক্ষাই একটি জাতির মেরুদণ্ড'

লেখক: রিমা সুলতানা, শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল