রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাংকার-বাস্টার’-এ ইরানের ফোরদো 'ধ্বংসের' দাবি, কতটা ভয়ানক এই বোমা?

রোববার, জুন ২২, ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাংকার-বাস্টার’-এ ইরানের ফোরদো 'ধ্বংসের' দাবি, কতটা ভয়ানক এই বোমা?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, মার্কিন সামরিক বাহিনী ইরানের প্রধান তিন পারমাণবিক স্থাপনায় 'অত্যন্ত সফল' হামলা চালিয়েছে। নাতাঞ্জ, ইসফাহান ও ফোরদোতে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বি-২ বোমারু বিমান। ফোরদোতে ছয়টি বাঙ্কার বাস্টার বোমা ফেলা হয়েছে। আর অন্য পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে নিক্ষেপ করা হয়েছে ৩০টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র।

৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের 'বাংকার বাস্টার' বোমার আনুষ্ঠানিক নাম জিবিইউ-৫৭ এ/বি ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনেট্রেটর (এমওপি)। মার্কিন বিমানবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, এই বোমাটি তৈরি করা হয়েছে "শত্রুর গোপন ও সুরক্ষিত স্থাপনায় থাকা গণবিধ্বংসী অস্ত্র ধ্বংসের" উদ্দেশ্যে।

এই বোমায় রয়েছে প্রায় ৬,০০০ পাউন্ড উচ্চ বিস্ফোরক। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মিসাইল ডিফেন্স প্রজেক্টের গবেষক মাসাও ডালগ্রেন বলেন, এই শক্তিশালী বোমা মাটির অনেক গভীরে আঘাত হানতে পারে যেমন ইরানের ফোরদো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট, যা একটি পাহাড়ের ভেতরে নির্মিত এবং অনেক গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত।


বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংসে এই বোমাই একমাত্র কার্যকর উপায়। আর এ কারণেই ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে এই অস্ত্র ব্যবহারের জন্য চাপ দিয়েছে। 

ইরানের এই পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সক্ষমতা শুধু যুক্তরাষ্ট্রেরই আছে

ইরানের গুরুত্বপূর্ণ ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনাটি এত গভীরে নির্মিত যে সাধারণ বোমা দিয়ে সেখানে আঘাত হানা প্রায় অসম্ভব। এই ধরনের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার মতো ক্ষমতা এখন শুধু যুক্তরাষ্ট্রেরই আছে তাদের এমপিও বোমাটির মাধ্যমে। 

ডালগ্রেন জানান, এই বোমার খোলস অত্যন্ত পুরু ও শক্ত। এতে এমন বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে যা শক্ত মাটি ভেদ করেও গভীরে পৌঁছাতে পারে, তবুও ফিউজ ছাড়া বিস্ফোরণ ঘটবে না। "শক্ত খোলস মাটি ভেদ করে গভীরে গিয়ে যথেষ্ট শক্তি সঞ্চার করে। আর ফিউজ এতটাই শক্ত ও বুদ্ধিমান যে তা সব চাপ সহ্য করে সঠিক সময়ে বিস্ফোরণ ঘটায়। এটা অনেক জটিল একটি প্রযুক্তি," বলেন তিনি। ফোরদো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট ঠিক কতটা গভীরে নির্মিত, তা সঠিকভাবে জানা যায়নি।

তবে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি ভূমির প্রায় ৮০ থেকে ৯০ মিটার নিচে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এমওপি বোমাও হয়তো একবারেই এই স্থাপনাকে ভেদ করতে পারবে না। সফলভাবে আঘাত হানতে একই স্থানে একাধিকবার হামলার প্রয়োজন হতে পারে বলে ধারণা তাদের।

এই বোমার পরীক্ষা শুরু হয় ২০০৪ সালে, যখন বিশ্বজুড়ে গণবিধ্বংসী অস্ত্র নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছিল। ডালগ্রেন জানান, তখনকার গবেষণায় দেখা যায়, কেবল একটি স্থাপনার প্রবেশপথে বোমা ফেললে পুরো স্থাপনাটি ধ্বংস হয় না।

"শুধু প্রবেশপথে হামলা চালিয়ে পুরো স্থাপনাটি ধ্বংস করা যায় না," বলেন ডালগ্রেন। "এই কারণে এমন বোমার প্রয়োজন, যা গভীরে প্রবেশ করে ভেতরের কাঠামোকে ধ্বংস করতে পারে। না হলে সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ হলেও, পুরো প্রোগ্রামকে থামানো যায় না।"

২০০৯ সালে বোয়িং কোম্পানি এই অস্ত্র বিমানবাহিনীর ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত করে তোলে। বর্তমানে শুধু ইউএস এয়ারফোর্সের বি-২ স্পিরিট বিমানই এই বোমা বহনে সক্ষম।

নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান নর্থরপ গ্রুম্যানের তৈরি এই বি-২ বিমানকে 'স্টেলথ বা রাডার-এড়ানোর প্রযুক্তির মেরুদণ্ড' বলা হয়। মিসৌরির হোয়াইটম্যান বিমানঘাঁটি থেকে এই বিমান চালানো হয়। এটি প্রথমবার প্রকাশ্যে আনা হয় ১৯৮৮ সালের নভেম্বরে।

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুথিদের বিরুদ্ধে হামলায় এই বিমান ব্যবহার করে। লক্ষ্য ছিল ভূগর্ভস্থ অস্ত্র গুদাম।

দুই জন পাইলট মিলে চালানো এই বিমান জ্বালানি না নিয়েই প্রায় ৬,০০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত উড়তে পারে। ইউএস এয়ারফোর্স বলছে, এর রাডার-এড়ানো ক্ষমতা একে শত্রুর কঠিনতম প্রতিরক্ষা ভেদ করে সবচেয়ে সুরক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ঠিক কতগুলো এমওপি বোমা আছে, তা স্পষ্ট নয়। ২০০৯ সালে তারা বোয়িং বিমানবাহিনীকে ২০টি বোমা সরবরাহ করে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত এ সংখ্যাই জানানো হয়। ডালগ্রেনের ধারণা, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মজুদে আনুমানিক ৩০টি এমওপি রয়েছে।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল