আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যেকোনো যুদ্ধেই যারা নেতৃত্ব দেন, বিশেষ করে আক্রান্ত দেশ হয়- তার নেতারা প্রকাশ্যে থাকেন না। তারা নিরাপত্তার প্রয়োজনে আত্মগোপনে থাকেন। কারণ, যেকোনো সময় তাকে বা তাদেরকে হত্যা করা হতে পারে। এমন আশঙ্কা আছে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ক্ষেত্রেও। তাকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিয়েছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ফলে তার জীবনের মূল্য অপরিসীম। এই জীবন বাঁচাতে এবং দেশকে সঠিক পথে রাখতে তিনি গোপন বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছেন এবং সম্ভাব্য হত্যা প্রচেষ্টার আশঙ্কায় তিনজন শীর্ষ ধর্মীয় নেতাকে উত্তরসূরি হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন। নিউ ইয়র্ক টাইমস’কে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইসরাইল।
এতে বলা হয়, ৮৬ বছর বয়সী খামেনি ১৯৮৯ সাল থেকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। তার কথাই ইরানে সব। ইসরাইলি গুপ্তহত্যার হুমকি এবং চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইরানের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বে বিকল্প রূপরেখা প্রস্তুত করেছেন আগেই। তিনজন ইরানি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খামেনি সামরিক বাহিনীর পদাধিকারক্রমে একাধিক বিকল্প কমান্ডারও মনোনয়ন দিয়েছেন, যদি ইসরাইল আরও শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে। প্রতিবেদন অনুসারে, ইরানি গোয়েন্দা মন্ত্রণালয় সকল শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা ও সামরিক কমান্ডারদের আন্ডারগ্রাউন্ডে অবস্থান করতে নির্দেশ দিয়েছে। তাদেরকে মোবাইল ফোনসহ সব ধরনের ইলেকট্রনিক যোগাযোগ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। খামেনিই এখন শুধু একজন বিশ্বস্ত সহকারীর মাধ্যমে নির্দেশ পাঠাচ্ছেন, ইঙ্গিত করছে নেতৃত্বে গভীর নিরাপত্তা সংকট। ইরান ইন্টারন্যাশনা নামের একটি ভিন্নমতাবলম্বী সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরাইল ১৩ জুন ইরানে হামলা শুরু করার পর খামেনি ও তার পরিবার লাভিজানের একটি গোপন আশ্রয়স্থলে অবস্থান করছেন। তবে এই তথ্যের কোনো নির্ভরতা নেই।
উত্তরসূরি তালিকায় নেই ছেলে মোজতবা
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই তিন সম্ভাব্য উত্তরসূরির মধ্যে খামেনির ছেলে মোজতবা খামেনি নেই। মোজতবা ইরানের বিপ্লবী গার্ডের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এবং প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসির মৃত্যুর পর তাকে সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল।
মৃত্যু হলে যেন গণ্ডগোল না হয়
নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, খামেনি মনে করেন, যদি তিনি ইসরাইল বা যুক্তরাষ্ট্রের হাতে নিহত হন, তাহলে তা ‘শহীদ হওয়া’ হিসেবেই বিবেচিত হবে। তবে তিনি চান তার মৃত্যুর পর যেন দেশ উত্তরসূরি সংকটে না পড়ে এবং শত্রুদের সুযোগ না হয়। তাই তিনি ইরানের অ্যাসেম্বলি অব এক্সপার্টসের জন্য প্রস্তাবিত উত্তরসূরি তালিকা তৈরি করেছেন, যারা মৃত্যুর পর পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচন করবেন।
অন্যদিকে ইসরাইল দাবি করেছে, এই যুদ্ধের অংশ হিসেবে তারা ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর একযোগে হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় এখন পর্যন্ত ইরানের বিপ্লবী গার্ড, সেনাবাহিনী ও জরুরি সামরিক কমান্ডের বহু কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রথম দিনে খামেনিকে হত্যাচেষ্টায় ভেটো দেন। তিনি সম্প্রতি বলেন, আমি জানি তিনি কোথায় লুকিয়ে আছেন। কিন্তু এখনই তাকে হত্যা করছি না। সিদ্ধান্ত আসবে দুই সপ্তাহের মধ্যে।
ওদিকে ইরান পাল্টা জবাবে ৪৭০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রায় ১০০০ ড্রোন ইসরাইলের দিকে ছুড়েছে, যাতে এখন পর্যন্ত ২৪ জন নিহত এবং হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। ইরানের পার্লামেন্ট স্পিকারের উপদেষ্টা মাহদি মোহাম্মাদি বলেন, এই হামলা দেখিয়েছে, আমাদের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। আমাদের শীর্ষ কমান্ডারদের এক ঘণ্টার মধ্যে হত্যা করা হয়েছে। তবে অন্যদিকে, ইরানের সংস্কারপন্থী রাজনীতিক মোহাম্মদ আলী আবতাহী বলেছেন, ইসরাইলের হামলাগুলো দেশজুড়ে ঐক্য তৈরি করেছে— রাজনৈতিক বিভাজন কমেছে, জনগণের মধ্যে একতা দেখা যাচ্ছে।
এমআই