তালুকদার হাম্মাদ, ইবি প্রতিনিধি:
সমকামিতা, শিক্ষার্থী হেনস্তাসহ একাধিক দায়ে অভিযুক্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামকে স্থায়ীভাবে অপসারণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সোমবার (৩০জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোঃ মনজুরুল হক সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
গত ৩১ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কর্মচারী দক্ষতা ও শৃঙ্খলা বিধির ৪(১) (F) ধারা মোতাবেক তাকে আগামী চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পর্যালোচনাপূর্বক গত ২২/১২/২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২৬৬ তম সভার ৪৪ নং প্রস্তাব ও সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী দক্ষতা ও শৃঙ্খলা বিধির (4) i (b) ও (৫) ধারা মোতাবেক তাঁকে বাৎসরিক ০১ (এক) টি ইনক্রিমেন্ট/ধাপ বাতিল করা হয় এবং তাঁকে সিন্ডিকেট সভার (২২-১২-২০২৪) তারিখ থেকে ০১ (এক) বছরের বাধ্যতামূলক ছুটি প্রদান করা হয়।
সেখানে আরও বলা হয়, ‘ উক্ত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সকল শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬/০২/২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২৬৭ তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিষয়টি পুনরায় ব্যাপক তদন্তের জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ গত ৩১/০৫/২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২৬৮ তম (সাধারণ) সভার ০৭ নং সিদ্ধান্ত মোতাবেক পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী তদন্তের আলোকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও শৃঙ্খলার স্বার্থে তাঁর এহেন কর্মকান্ড ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী দক্ষতা ও শৃঙ্খলা বিধির চরম পরিপন্থি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী দক্ষতা ও শৃঙ্খলা বিধির ৪(১) (F) ধারা মোতাবেক তাঁকে ৩১/০৫/২০২৫ তারিখ থেকে চাকুরী হতে অপসারণ (Dismissal from Service) করা হলো’
এ ব্যাপারে বহিষ্কৃত শিক্ষক হাফিজকে কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে শ্রেণিকক্ষে ছাত্রীদের ‘নষ্টা ও বাজারের মেয়ে’সহ প্রকাশের অনুপযোগী বিভিন্ন ভাষায় গালিগালাজ, কথা না শুনলে মার্ক কম দেওয়া, মেয়েদের পার্সোনাল নাম্বারে কল দিয়ে বিরক্ত করা, ফেইক আইডি দিয়ে বিভিন্ন ছাত্রীর সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ কথোপকথন ও ছাত্রদের জোরপূর্বক সমকামীতায় বাধ্য করা সহ নানা অভিযোগ ওঠে। পরে তার অপসারণের দাবিতে প্রধান ফটক অবরোধ করে বিক্ষোভও করেছিলেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া উপাচার্যের কাছে তারা লিখিতভাবে ২৭ দফা অভিযোগ ও মৌখিকভাবে ঘটনার বর্ণনা দিলে অভিযোগের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতা পায়। এরপর সিন্ডিকেটের ২৬৬তম সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার বার্ষিক একটি ইনক্রিমেন্ট বাতিলসহ এক বছরের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। তবে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা হাফিজের এই শাস্তিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে হাফিজকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানায়। দাবি আদায়ে পরবর্তী ২৮ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করলে প্রশাসন এরই প্রেক্ষিতে পরবর্তী সিন্ডিকেটে শাস্তি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। এরপর ১৬মে এদিন সকাল ১০ টায় রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের গগন হরকরা মিলনায়তনে অধিকতর তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ড. আশরাফুর রহমান (ডিআইজি, ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন, পুলিশ হেডকোয়ার্টার, ঢাকা) বিভাগের ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। ‘ তদন্ত কমিটি সঠিক বিচার করা থেকে বিরত থাকতে পারে’ এমন আভাস পেয়ে সেদিন শিক্ষার্থীরা আশরাফুর রহমান, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা, কোষাধ্যক্ষসহ অন্যান্যদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ ঘটনার পরের সিন্ডিকেট সভাতেই উক্ত শিক্ষককে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।