বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫

বৃষ্টি কমবে কবে, বন্যার শঙ্কা কতটা?

মঙ্গলবার, জুলাই ৮, ২০২৫
বৃষ্টি কমবে কবে, বন্যার শঙ্কা কতটা?

সময় জার্নাল ডেস্ক:

সোমবার রাত থেকে দেশের প্রায় সকল বিভাগেই টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং কোনো কোনো অঞ্চলের নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি চলে এসেছে।

বাংলাদেশে জুলাই হলো সবচাইতে বেশি বৃষ্টিপ্রবণ মাস। গত বছর এই সময়ের মাঝেই অর্থাৎ আগস্টে নজিরবিহীন বন্যা হয়েছিল দেশে। তখন দেশের বিভিন্ন জেলায় কয়েক লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং প্রাণহানিও হয়েছে।

বৃষ্টি কমবে কবে?

গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও আশপাশের এলাকায় এই মুহূর্তে একটি লঘুচাপ অবস্থান করছে। এই লঘুচাপের কারণেই মৌসুমি বায়ু এখন বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে সক্রিয়, অন্যান্য জায়গায় মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। মৌসুমি বায়ুর বর্ধিতাংশ এখন রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্তও বিস্তৃত। ফলে, দেশের সকল বিভাগের কোথাও না কোথাও এখন হালকা থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

তবে এই বৃষ্টিকে ‘স্বাভাবিক’ উল্লেখ করে আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা মঙ্গলবার দুপুরে জানিয়েছেন, আজ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ফেনীতে ২২২ মিলিমিটার, পটুয়াখালীতে ১১০ মিলিমিটার, মাইজদীকোর্টে ৬২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এখন পর্যন্ত বন্যার শঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। কারণ বৃষ্টি আমাদের উত্তর দিকে হচ্ছে না, পশ্চিম দিকে হচ্ছে। তাই, বন্যার প্রবণতা কম।

গতকাল সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজারে, ১৫৭ মিলিমিটার। চট্টগ্রামের হাতিয়া, সন্দ্বীপ, ফেনী; খুলনার মোংলা এবং বরিশালের পটুয়াখালী ও খেপুপাড়াতেও একশো মিলিমিটারের বেশি পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে ওইদিন।

এদিকে, বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমু্দ্র বন্দরসমূহের ওপর দিকে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।

আরও বলা হয়েছে, দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সক্রিয়তার কারণে আজ সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।

আর অতি ভারী বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। সেই সাথে ভারী বর্ষণজনিত কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে।

একইরকম বৃষ্টিপাত হচ্ছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও। কলকাতা থেকে বিবিসি বাংলা'র সংবাদদাতা জানিয়েছেন, নিম্নচাপের জেরে কলকাতা, হাওড়া, হুগলী, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় গতকাল থেকেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে।

ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ ও ওড়িশার কিছু কিছু স্থানে গতি ২৪ ঘণ্টায় অতি ভারী বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যার পরিমাণ ছিল ৭০ থেকে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত। এছাড়া, আসাম, ত্রিপুরা, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা, পূর্ব রাজস্থান, ছত্তিশগড়সহ কিছু স্থানে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ৭০ থেকে ১১০ মিলিমিটার পর্যন্ত।

প্রশ্ন হলো, এই বৃষ্টিপাত কমবে কবে? বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামীকাল নাগাদ লঘুচাপের প্রভাব কেটে গিয়ে বৃষ্টিপাত কিছুটা কমতে শুরু করবে।

ভারতের আলিপুর আবহাওয়া দফতর থেকেও জানানো হয়েছে, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি ক্রমশ ঝাড়খণ্ড ও ছত্তিশগড়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

বৃষ্টিপাতের কারণে ঢাকার মতো ভারতের কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলও জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।

দেশে দেশে বন্যা, বাংলাদেশে বন্যার শঙ্কা কতটা

ভারতের হিমাচল প্রদেশে প্রবল বৃষ্টি ও বন্যার কারণে গত ২০ জুন থেকে গতকাল ৭ জুলাই পর্যন্ত ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। তবে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল (এএনআই) বলছে, গত ছয় দিনে টানা বৃষ্টির কারণে হিমাচল প্রদেশে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে এ পর্যন্ত প্রায় ১৪ জন মারা গেছে, ২৮ জন নিখোঁজ রয়েছে ও পাঁচ জন আহত হয়েছে।

স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (এসডিএমএ) নিশ্চিত করেছে, অধিকাংশ প্রাণহানিই ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যার মতো বৃষ্টিজনিত কারণে হয়েছে। এর মাঝে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজ্যটির মানডি জেলা। সেখানকার শত শত ঘরবাড়ি, দোকান-পাট, ব্রিজ, গোয়ালঘর আকস্মিক বন্যা ও ক্লাউডবার্স্টের কারণে ধ্বংস হয়েছে।

এদিকে, বিবিসি'র উর্দু বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পাঞ্জাবে আরও দুইদিন এই বৃষ্টিপাত চলবে।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসেও গতকাল ভারী বৃষ্টিয়াতের কারণে প্রবল বন্যা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সেখানে এই বন্যায় মারা গেছে ১০৪ জন, নিখোঁজ রয়েছে ৪১ জন। ক্যারি কাউন্টেতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আনুমানিক ৭৫ জন মারা গেছে সেখানে। অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত কাউন্টিগুলোর মধ্যে রয়েছে ট্র্যাভিস, বার্নেট, উইলিয়ামসন, কিন্ডল এবং টম গ্রিন কাউন্টি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে উদ্ধার অভিযান এবং অনুসন্ধান এখনো চলছে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। এখনো অনেক মরদেহ শনাক্ত করা যায়নি। তবে তীব্র আবহাওয়া উদ্ধার কার্যক্রমকে জটিল করে তুলতে পারে। একইসাথে কাদা ও ধ্বংসাবশেষের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় উদ্ধারকারী দলগুলো বিষাক্ত সাপের মুখোমুখি হতে পারে।

বাংলাদেশে এখন যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তা থেকে বন্যা হতে পারে কি না জানতে চাওয়া হয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র ও আবহাওয়া অধিদফতরে। উভয় বিভাগ থেকেই জানানো হয়েছে, সেরকম কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হলেও প্রধান নদীগুলোর পানি বিপদসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাই, আগামী তিন দিনে বন্যার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না।

কয়েক দিন ঝরতে পারে টানা বৃষ্টি

তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হবে। তাই, এই সময়ে চট্টগ্রামের প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়তে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, গঙ্গা, পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা...কোনোটির পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।’

‘শুধু ফেনীর মুহুরি, চট্টগ্রাম-বান্দরবানের সাঙ্গু সতর্কসীমায় প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে বৃষ্টিপাত ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টায় কমে গেলে গেলে পানিও কমে যাবে।’

তার মতে, ‘আমাদের অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতি নেই। আসাম ত্রিপুরা, মেঘালয়, বিহার, উত্তরপ্রদেশে বন্যা নেই। এই কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে।’

এদিকে, আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানাও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বন্যার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। কারণ বৃষ্টি আমাদের উত্তর দিকে হচ্ছে না, পশ্চিম দিকে হচ্ছে। তাই, বন্যার প্রবণতা কম।’

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সর্বশেষ পূর্বাভাসেও জানানো হয়েছে, চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, সাঙ্গু, হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে, এসব নদীর পানির মাত্রা আগামী এক দিন বৃদ্ধি পেয়ে পরে স্থিতিশীল হতে পারে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল