শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫

মিডফোর্ড হত্যাকাণ্ড: জবানবন্দিতে বেরিয়ে এলো পৈশাচিক উল্লাসের নৃশংস বর্ণনা

শুক্রবার, জুলাই ১৮, ২০২৫
মিডফোর্ড হত্যাকাণ্ড: জবানবন্দিতে বেরিয়ে এলো পৈশাচিক উল্লাসের নৃশংস বর্ণনা

সময় জার্নাল ডেস্ক:

পুরান ঢাকায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (মিটফোর্ড হাসপাতাল) সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) হত্যার পর তার রক্ত নিজের বুকে মেখে উল্লাস করেন আসামি আলমগীর। মৃত্যু নিশ্চিত করার পর অন্য আসামিরা সোহাগের নিথর দেহে মারতে থাকেন চড়-থাপ্পড়, তার বুকের ওপর উঠে মেতে ওঠেন পৈশাচিক উল্লাসে।

সোহাগ হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গতকাল বৃহস্পতিবার আলমগীরসহ তিন আসামির আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ওইদিন তিনজনকেই বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর তারা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় ফৌজদারি কার্যবিধি আইনে ১৬৪ ধারায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান।

ভিকটিমকে আঘাত করতে করতে তার দোকানের সামনে থেকে মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের ভেতরে নিয়ে যান এবং নেওয়ার পথে ভিকটিমের পরনে থাকা আন্ডার প্যান্ট ছাড়া সব পোশাক ছিঁড়ে তাকে বিবস্ত্র করা হয়

আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুল ইসলাম, মোহাম্মদ এহসানুল ইসলাম ও আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাইদের আদালত আসামিদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। দোষ স্বীকার করা তিন আসামি হলেন- টিটন গাজী, আলমগীর ও মনির ওরফে লম্বা মনির।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আলোচিত এ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘গ্রেফতার তিন আসামি ভিকটিম সোহাগকে হত্যার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন। আদালত তাদের এ জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন।’

আদালত সূত্রে জানা গেছে, আসামি আলমগীর তার জবানবন্দিতে বলেন, তিনি অন্য আসামিদের সঙ্গে থেকে সোহাগকে তার ‘সোহানা মেটাল’ নামক দোকান থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করেন। তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকেন। এসময় আলমগীর ভিকটিমকে আঘাত করতে করতে তার দোকানের সামনে থেকে মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের ভেতরে নিয়ে যান এবং নেওয়ার পথে ভিকটিমের পরনে থাকা আন্ডার প্যান্ট ছাড়া সব পোশাক ছিঁড়ে তাকে বিবস্ত্র করা হয়।

আসামি আলমগীর ভিকটিমের মুখের ওপর উপর্যুপরি চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। এসময় হাতে লেগে থাকা সোহাগের রক্ত বুকে মেখে পৈশাচিক উল্লাস করতে থাকেন

আসামি আলমগীর তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে ফের সোহাগকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন। এর ফলে সোহাগ নিস্তেজ হয়ে পড়েন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরেও আলমগীর ভিকটিমের মুখের ওপর উপর্যুপরি চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। এসময় হাতে লেগে থাকা সোহাগের রক্ত বুকে মেখে পৈশাচিক উল্লাস করতে থাকেন আসামি আলমগীর।

আসামি মনির তার জবানবন্দিতে বলেন, সোহাগকে মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের ভেতরে নেওয়ার পর তিনি সোহাগের মাথায় ইট দিয়ে চার-পাঁচটি আঘাত করেন। একপর্যায়ে ভিকটিম রাস্তার ওপর পড়ে গেলে আসামি মনির ইট-পাথরের টুকরা দিয়ে মাথায় সজোরে আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। মৃত্যু নিশ্চিত করার পর সোহাগকে মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে নিয়ে আসা হয়। এসময় তার মরদেহের ওপর আসামিরা লাফাতে থাকেন এবং বর্বরতম উল্লাস করেন।

আসামি টিটন গাজী তার জবানবন্দিতে বলেন, সোহাগকে তার দোকান থেকে টেনেহিঁচড়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের ভেতরে নেওয়ার পর আসামি টিটন গাজী হাতে থাকা লাঠি দিয়ে ভিকটিমকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকেন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর মরদেহ হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে এনে আসামি টিটন গাজী ও অন্য আসামিদের সঙ্গে ‘চাঁদাবাজের ঠাঁই নাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন এবং তারা সেখানে পৈশাচিক উল্লাসে মেতে ওঠেন।

গত ১২ জুলাই টিটন গাজীর পাঁচদিন ও গত ১৩ জুলাই আলমগীর ও মনিরের চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার পৃথক সিএমএম আদালত।

মৃত্যু নিশ্চিত করার পর সোহাগকে মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে নিয়ে আসা হয়। এসময় তার মরদেহের ওপর আসামিরা লাফাতে থাকেন এবং পৈচাশিক উল্লাসে মেতে ওঠেন

গত ৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যস্ত সড়কে একদল লোক ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) পাথর দিয়ে আঘাত করে মাথা থেঁতলে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ঘটনায় পরদিন ১০ জুলাই নিহত ব্যক্তির বড় বোন মঞ্জুয়ারা বেগম বাদী হয়ে ১৯ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়।

একই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক একটি অস্ত্র মামলা দায়ের করে। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন রেজওয়ান উদ্দিন, নান্নু কাজী, সজীব ব্যাপারী, রাজীব ব্যাপারী, টিটন গাজী, মাহমুদুল হাসান মহিন, তারেক রহমান রবিন, আলমগীর ও মনির ওরফে লম্বা মনির। এরমধ্যে আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ পরিবার নিয়ে রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন পূর্ব নামাবাড়ি এলাকায় থাকতেন। তার বাবার নাম ইউসুফ আলী হাওলাদার। সোহাগ দীর্ঘদিন ধরে মিটফোর্ড এলাকার ৪ নম্বর রজনী ঘোষ লেনে ভাঙারির ব্যবসা করতেন। নিজ জেলা বরগুনার ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর এলাকার বাদলগাছিয়া গ্রামে মামার বাড়িতে মায়ের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়েছে।


একে 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল