মুহা. জিল্লুর রহমান, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
কোটা সংষ্কার আন্দোলন চলাকালে ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই আহত সহযোদ্ধাকে পানি খাওয়াতে টেনে তুলতে গিয়ে নিজেই পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন সাতক্ষীরার ছেলে আসিফ হাসান। ঢাকার উত্তরা এলাকায় ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে আহত আরেক সহযোদ্ধাকে বাঁচাতে গিয়ে শহীদ হন তিনি। তিনি ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী।
নর্দান ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আসিফ হাসান সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার আস্কারপুর গ্রামের ছেলে মাহমুদ আলম এর ছেলে। তার জন্ম ৫ আগষ্ট ২০০৩।
ঢাকা শহরের অদূরে উত্তরার উত্তপ্ত সড়কে আন্দোলনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে মোবাইলে বোনকে বলেছিলেন, আপা, আমি ঠিক আছি। পুলিশ শুধু ফাঁকা গুলি ছুড়ছে। আমাদের এক ভাই গুলিবিদ্ধ, ওকে পানি খাওয়াতে যাচ্ছি। সেই ভাইকে আর পানি খাওয়ানো হয়নি। পানি খাওয়ানোর জন্য অহত সহযোদ্ধাকে টেনে তুলতে গিয়ে নিজেই গুলিবিদ্ধ হন আসিফ। কিছুক্ষণ পর কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আসিফের জমজ ভাই সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ছাত্র রাকিব হাসান বলেন, পুলিশের গুলিতে ভাই মারা গেছে প্রায় এক বছর হয়ে গেছে। আমার ভাইয়ের অনুপস্থিতি বড়ই কষ্টদায়ক, বেদনার। সে ছাড়া আমার পরিবার ভালো নেই। সবাই আমার ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন।
রাকিব হাসান আরো বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় মামলার তদন্ত চলছে, পুলিশকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। বিচার হবে বলেছে। এখন আইনের বিষয়ে আমরা তো আর ভালো বলতে পারব না। ঢাকায় একজন মামলা করেছে। পরিবার থেকে মামলা করা হয়নি। তিনি তার ভাইয়ের হত্যার বিচার দাবি করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী মোহিনী তাবাসসুম বলেন, সাতক্ষীরায় নিহত শহীদ পরিবারের সদস্য যারা আছেন, আমরা প্রতিনিয়ত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করি। তাদের সব সুবিধা ও অসুবিধায় পাশে থাকার চেষ্টা করি। আমরা চাই যে, সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে সর্বোচ্চ সম্মানটা দেওয়া হোক। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত সাতক্ষীরার শহীদ আসিফ হাসানের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে তার কবর জিয়ারত করেছেন জামায়াত নেতৃবৃন্দ। শুক্রবার (৯ জুলাই) সকালে জামায়াত নেতৃবৃন্দ দেবহাটার আস্কারপুর গ্রামে শহীদ আসিফ হাসানের বাড়িতে যান। এসময় তারা নিহত আসিফ হাসানের পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাত করেন এবং নিহতের আত্মার মাগফিরাত কামনায় কবর জিয়াতর ও দোয়া মোনাজাত করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসের শুরা সদস্য মুফতি মুহাদ্দিস রবিউল বাশারসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
একইভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা শুক্রবার দুপুরে শহীদ আসিফ হাসানের বাড়িতে যান এবং তার কবর জিয়ারত করেন।
এমআই