বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

গাজায় অনাহারে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ১৫ জনের, নিহতদের একজন ছয় সপ্তাহের শিশু

বুধবার, জুলাই ২৩, ২০২৫
গাজায় অনাহারে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ১৫ জনের, নিহতদের একজন ছয় সপ্তাহের শিশু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা ও খাদ্যবাহী সহায়তা বন্ধের কারণে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে অনাহারে মারা গেছেন অন্তত ১৫ জন। মৃতদের মধ্যে মাত্র ছয় সপ্তাহ বয়সী এক নবজাতক শিশুও রয়েছে।

মূলত দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষুধা-দারিদ্র্যের মুখোমুখি এই উপত্যকায় এখন সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। বুধবার (২৩ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, অনাহারে মারা যাওয়া ছয় সপ্তাহ বয়সী ওই শিশুর নাম ইউসুফ আবু জাহির। তার মৃত্যু হয় দুধের অভাবে। শিশুটির চাচা আদহাম আল-সাফাদি বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “বাজারে কোথাও দুধ নেই, আর পাওয়া গেলেও একটি ছোট টিনের কৌটার দাম ১০০ ডলার পর্যন্ত।”

আল জাজিরা বলছে, মঙ্গলবার না খেয়ে মৃত্যুবরণকারী অন্যদের মধ্যে আরও তিন শিশুও রয়েছে। তাদের একজন ছিল ১৩ বছর বয়সী আব্দুলহামিদ আল-ঘালবান। তার মৃত্যু হয় গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস শহরের একটি হাসপাতালে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েল গাজায় তাদের সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১০১ জন অপুষ্টি ও অনাহারে মারা গেছে। এর মধ্যে ৮০ জনই শিশু। আর অধিকাংশ মৃত্যুই হয়েছে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে।

ইসরায়েল গত মার্চ মাসে গাজায় সব ধরনের পণ্য প্রবেশ বন্ধ করে দিলে খাদ্য মজুত ফুরিয়ে যায়। পরে মে মাসে সীমিত আকারে সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়, যা মূলত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামে একটি মার্কিন-ইসরায়েল সমর্থিত সংস্থার মাধ্যমে বিতরণ হয়। এতে জাতিসংঘের কোনও ভূমিকা রাখার সুযোগ দেওয়া হয়নি।

কিন্তু এই সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রগুলোর কাছাকাছি জায়গায় সহায়তা নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এক হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এসব মৃত্যুর বেশিরভাগই ঘটেছে মে মাসের পর থেকে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, “জিএইচএফ-এর এই সহায়তা বিতরণ ব্যবস্থা এক প্রকার ‘নৃশংস মৃত্যুফাঁদ’। সহায়তার অপেক্ষায় থাকা সাধারণ মানুষজনের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হচ্ছে, যেন তাদের হত্যার বৈধতা দেওয়া হয়েছে।”

ইসরায়েল দাবি করছে, হামাস এই সহায়তা ছিনিয়ে নিচ্ছে, যদিও এর পক্ষে তারা কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। অন্যদিকে জিএইচএফ জাতিসংঘের তথ্যকে “অতিরঞ্জিত ও ভুল” বলে দাবি করেছে।

লাজারিনি আরও জানান, গাজায় ইউএনআরডব্লিউএ’র কর্মী, চিকিৎসক ও মানবিক সহায়তাকারীরা নিজেরাই ক্ষুধা ও ক্লান্তিতে কাজ করতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই পরিস্থিতিকে বর্ণনা করেছেন “ভয়াবহ দৃশ্যপট” হিসেবে। তিনি বলেন, “২৩ লাখ ফিলিস্তিনি যেভাবে বোমাবর্ষণ, অপুষ্টি ও অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন, তা সমসাময়িক ইতিহাসে নজিরবিহীন। মানবিক সহায়তা ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।”

গাজার আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া বলেন, প্রতিমুহূর্তে গাজায় ক্ষুধায় কাহিল রোগীরা হাসপাতালে আসছে। তিনি বলেন, “তাদের চিকিৎসা দেওয়ার মতো উপকরণ আমাদের হাতে নেই।”

আল আকসা শহীদ হাসপাতালের মুখপাত্র খলিল আল-দাকরান জানান, প্রায় ৬ লাখ মানুষ গাজায় অপুষ্টিতে ভুগছেন। এর মধ্যে ৬০ হাজার গর্ভবতী নারী রয়েছেন। তিনি বলেন, “যারা না খেয়ে আছে তাদের মধ্যে ডিহাইড্রেশন ও রক্তস্বল্পতা দেখা যাচ্ছে।”

সূত্র: জাজিরা, রয়টার্স

একে 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল