সময় জার্নাল ডেস্ক:
সরকারের একমাত্র ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগ্স কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) শিরায় দেওয়া স্যালাইন উৎপাদনে যাচ্ছে। এরই মধ্যে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে। সব ঠিক থাকলে এ মাসের শেষ দিকে ইডিসিএলের গোপালগঞ্জ কারখানায় পুরোদমে উৎপাদন শুরু হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেঙ্গুর ভরা মৌসুমে সারাদেশে প্রায় ১০ হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। এ সময় শিরায় দেওয়া স্যালাইনের চাহিদা বেড়ে যায়। জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে ৭ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৮ লাখ ব্যাগ স্যালাইনের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে সাধারণ স্যালাইন ৫ লাখ এবং গ্লুকোজ স্যালাইন ৩ লাখ ব্যাগ।
শুধু সরকারি হাসপাতালের জন্য ছয় মাসে প্রায় ৪৮ লাখ ব্যাগ স্যালাইন মজুত রাখতে হয়। তবে গত বছর জুলাইয়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় দেশে হঠাৎ স্যালাইন সংকট দেখা দেয়। ওই সময়ে সরকার ২০ লাখ ব্যাগ স্যালাইন ভারত থেকে আমদানি করে। তাই এ সংকট নিরসনে ইডিসিএলকে স্যালাইন উৎপাদনের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ইডিসিএলের গোপালগঞ্জ কারখানার মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ২০ থেকে ২৪ আগস্টের মধ্যে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তিন সদস্যের একটি দল কারখানা পরিদর্শনে আসবে। তারা অনুমোদন দিলে ২৫ থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে যে কোনো দিন স্যালাইন উৎপাদন শুরু হবে। এই কারখানায় দৈনিক ৩৪ হাজার ব্যাগ স্যালাইন উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। শিগগির আরও দুটি যন্ত্র যুক্ত হলে উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়াবে তিন গুণ। তখন প্রতিদিন এক লাখ ব্যাগ স্যালাইন উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
জানা গেছে, বর্তমানে কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে শিরায় দেওয়া স্যালাইন উৎপাদন হচ্ছে না। দেশে ৬টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্যালাইন উৎপাদন করে। এর মধ্যে লিব্রা ইনফিউশনস ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস স্যালাইন উৎপাদন সাময়িক বন্ধ রেখেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একমাত্র ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইডিসিএল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে স্যালাইন কিনে সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করে। এতে স্যালাইনের দাম বেশি পড়ে। তবে সরকার নিজে উৎপাদন করলে কম মূল্যে স্যালাইন সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামাদ মৃধা জানান, এই মাসের মধ্যেই স্যালাইন উৎপাদন শুরু হবে। এই স্যালাইন সরবরাহ করা হবে দেশের ৬৬০টি সরকারি হাসপাতালে। সরকার ইডিসিএল থেকে এই স্যালাইন কিনে রোগীদের বিনামূল্যে দেবে।
ইডিসিএল সূত্র জানায়, প্রথমে তিন ধরনের শিরায় দেওয়া স্যালাইন উৎপাদন করা হবে। বর্তমানে ১০০ মিলি স্যালাইন কিনতে হয় ৪৮ টাকায়, যা ইডিসিএল উৎপাদন করলে কেনা যাবে ৩৮ টাকায়। ৫০০ মিলি স্যালাইন বর্তমানে ৬৭.৭৪ টাকা; ইডিসিএল সেটি ৫২ টাকায় দিতে পারবে। হাজার মিলি স্যালাইন এখন ৮৭ টাকা, যা ৭০ টাকায় সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক আসরাফ হোসেন বলেন, স্যালাইন উৎপাদনের আগে নিবন্ধন নিতে হয়। এর পর হয় পরীক্ষামূলক উৎপাদন। ইডিসিএল থেকে পরিদর্শনের প্রস্তাব পেয়েছি।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে স্যালাইন উৎপাদন বন্ধ ৬ বছর
দেশের একমাত্র সরকারি স্যালাইন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রাজধানীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট গত ৬ বছর ধরে স্যালাইন উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। এতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে উৎপাদন চালুর জন্য চিঠি চালাচালি হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, যখন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের আইভি ফ্লুইড উৎপাদন ইউনিট সচল ছিল, তখন তারা ৯ ধরনের স্যালাইন (গ্লুকোজ, গ্লুকোজ অ্যাকুয়া, নরমাল, কলেরা, পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস, ৩ শতাংশ নরমাল, বেবি, হেমোডায়ালাইসিস ফ্লুইড ও হার্টসম্যান) উৎপাদন করত। তখন দিনে গড়ে ১০-১১ হাজার ব্যাগ স্যালাইন উৎপাদন হতো। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের বন্ধ স্যালাইন কারখানা চালুর উদ্যোগ নেই সরকারের। ইডিসিএলের উৎপাদিত স্যালাইন দিয়েই সংকট মোকাবিলা করার চেষ্টা চলছে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছি। আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে আরও একটি স্যালাইন কারখানা প্রস্তুত করা হবে। আমাদের পরিকল্পনা হলো, সরকারি হাসপাতালে স্যালাইনের সব চাহিদা সরকারিভাবেই পূরণ করা।
একে