বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫

বৃষ্টি ও উজানের ঢলে বাড়ছে পদ্মা-তিস্তার পানি, ১২ জেলায় বন্যার আশঙ্কা

বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১৪, ২০২৫
বৃষ্টি ও উজানের ঢলে বাড়ছে পদ্মা-তিস্তার পানি, ১২ জেলায় বন্যার আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিনিধি:

বৃষ্টি ও উজানের ঢলে দেশে নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। বিশেষ করে তিস্তা ও পদ্মায় পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপদসীমার কাছাকাছি বা এর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে অন্তত ১২ জেলায় বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি জেলায় ডুবে গেছে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও চরাঞ্চল।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল বুধবার সর্বশেষ বুলেটিনে বলেছে, লালমনিরহাট, নীলফামারি, রংপুর, কুড়িগ্রাম, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পাবনা, মানিকগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

গতকাল দুপুরে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমা (৫২.১৫ মিটার) থেকে ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সকালে এ উচ্চতা ছিল ৭ সেন্টিমিটার ওপরে। পানি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সব (৪৪টি) জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছার তিস্তাবেষ্টিত চরাঞ্চলের নিম্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মিটারী, কোলকোন্দ, নোহালী, গজঘণ্টা ও মর্নেয়া ইউনিয়নের প্রায় ৪০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে আমন ধান ও সবজির ক্ষেত। লক্ষ্মিটারীর পশ্চিম ইছলি গ্রামের গৃহবধূ কুমোবালা বলেন, ‘সকাল থেকে ঘরের ভেতরে পানি ঢুকেছে। আল্লাহ জানেন, কী হবে।’ কোলকোন্দ ইউনিয়নের খলাইর চর ও মটুকপুর গ্রামেও একই রকম অবস্থা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়া জরুরি।
টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে লালমনিরহাটে তিস্তার পানি আবারও বেড়েছে। এতে নিম্নাঞ্চলের অনেক এলাকায় জলমগ্ন হয়ে পড়েছে, ডুবে গেছে  সবজি,পাটক্ষেত ও রোপা আমন।

রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার নিচে থাকলেও গত দুই-তিন বছরের মধ্যে এবার পানির উচ্চতা তুলনামূলক বেশি। পানি বৃদ্ধির কারণে শহরের টি-বাঁধ এলাকায় সাধারণ মানুষের প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। চরাঞ্চলের শতাধিক ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে, অনেকে গবাদিপশু ও মালপত্র নিয়ে শহররক্ষা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। শ্রীরামপুর এলাকার শাহাবুল ইসলাম বলেন, ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। নৌকায় করে মালপত্র আনছি। এখন বাসা ভাড়া নিতে হবে। সুমি নামের এক নারী বলেন, হাঁটু পানিতে টিউবওয়েল থেকে পানি তুলতে হচ্ছে। কখন যে পানি আরও বাড়বে, সেই দুশ্চিন্তায় আছি।

রাজশাহী নগরীর পঞ্চবটি, তালাইমারি, কাজলা, পাঠানপাড়া ও বুলনপুর এলাকার বাসিন্দারাও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। রাজশাহীর দক্ষিণাঞ্চলের চরখিদিরপুর, খানপুর ও মিডলচরের অধিকাংশ এলাকা ডুবে গেছে।

পাবনার পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে প্রতিদিন ১০-১২ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। বর্তমানে পানির উচ্চতা ১২ দশমিক ৮০ মিটার, যা বিপদসীমার এক মিটার নিচে। সদর উপজেলার হেমায়েতপুর, ঈশ্বরদীর ধাপাড়ি ও সুজানগরের বরখাপুর এলাকার কলাবাগান ও সবজিক্ষেত তলিয়ে গেছে। গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে চরাঞ্চলে।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে গত এক সপ্তাহে পদ্মার পানি বেড়েছে প্রায় দেড় মিটার। চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। নাটোরের লালপুরে ৪ হাজার বিঘা জমির ফসল তলিয়ে গেছে, ৫০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় পদ্মার ভাঙন তীব্র হয়েছে। পিরোজপুর, চন্দনশহর, গোপালপুর ও ইউসুফপুর এলাকায় শত শত ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদ ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে। স্থানীয়রা বাঁশের চাটাই ও বালুর বস্তা দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন, কিন্তু তাতে খুব একটা সুফল মিলছে না।

কুড়িগ্রামের সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। গত দুই দিন ধরে ক্রমাগত পানি বেড়ে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি ফুঁসে উঠছে। ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

পাউবোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, রংপুর, রাজশাহী, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, আসাম, মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হতে পারে। এতে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি আরও বাড়তে পারে।

গঙ্গা নদীর পানি আগামী দুদিন স্থিতিশীল থেকে পরে কমতে পারে। তবে পদ্মার পানি তিনদিন বাড়বে এবং সতর্কসীমায় পৌঁছাতে পারে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানিও তিনদিন বাড়তে পারে। উপকূলীয় এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি জোয়ার আগামী তিনদিন অব্যাহত থাকতে পারে।

উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে।  রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে এবং উজানে ভারতের আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, ময়মনসিংহ বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, আসাম, মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানানো হয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, ‘ভারত ফারাক্কা বাধের সব গেট খুলে দেওয়ায় পানি বেড়েছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। টি-বাঁধ এলাকায় দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’

একে 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৫ সময় জার্নাল