শেকৃবি প্রতিনিধি :
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের টি.এস.সি অডিটোরিয়ামে “নবীন বরণ ও ক্যারিয়ার গাইডলাইন প্রোগ্রাম–২৫” শীর্ষক এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাকসু ভিপি ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক সাদিক কায়েম। তিনি বলেন,“আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা খুব দুর্ভাগ্যের। ব্রিটিশরা যে শিক্ষা ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে, আমরা এখনো সেটাই অনুসরণ করছি। ভারতের প্রেসক্রিপশনে তৈরি এই শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রশিবির ৩০ দফা প্রস্তাব দিয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা পাখি মারা হলে বিচার হতো, কিন্তু ছাত্রশিবিরের কর্মীকে হত্যা করলেও কোনো বিচার হতো না। এসব অন্যায়ের বৈধতা দিয়েছেন তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা। গত এক বছরে শিবির দেখিয়েছে কীভাবে নীতিনিষ্ঠ রাজনীতি করতে হয়।”
তিনি আরও বলেন, “সারা বিশ্বের এক উন্মুক্ত কারাগার ফিলিস্তিন। আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়াতে হবে। একইভাবে কাশ্মীরের মুসলমানদের দুঃখেও আমাদের সাড়া দিতে হবে।”
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন,“জুলাইয়ে আমাদের কিছু হিরো ছিল, কিন্তু তারা সেই জুলাইকে ধরে রাখতে পারেনি। ভারতই একমাত্র দেশ, যাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক নেই। রাষ্ট্রের বড় সমস্যা হচ্ছে—শিক্ষাব্যবস্থার মূল পরিবর্তন না হওয়া। ন্যায়ের পক্ষে ও অন্যায়ের বিপক্ষে দাড়াতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে যদি দাড়াতেই হয়, আমরা আবু সায়িদের মতো বুক পেতে দেব।”
কৃষিবিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আলী আফজাল বলেন,“তোমাদের ঠিক করতে হবে, তোমরা আসলে কী চাও। নতুন বাংলাদেশে কি আগের মতো চাঁদাবাজি, গুম-খুন থাকবে? আশা করি থাকবে না। আগামী দিনের বাংলাদেশে যদি জনসংখ্যা ৩৫ কোটিতে পৌঁছায়, তাহলে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই হবে। আদর্শ মানুষ তৈরিতে আমাদের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হলেও ইসলামী ছাত্রশিবির এই দিক দিয়ে ব্যতিক্রম। একজন শিক্ষার্থী যদি উদ্যোগতা হতে পারে, তবে সে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফিরোজ মাহমুদ। তিনি বলেন,“ছাত্রদের নৈতিক ও মানবিক দিক উন্নয়নের জন্য যে কাজগুলো করা প্রয়োজন, তা আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করতে পারি না, কারণ সেগুলো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার অংশ নয়। কিন্তু ইসলামের দিকে ডাকার জন্য একটি কাফেলা দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে—সেটি ইসলামী ছাত্রশিবির। শিবিরের জন্ম না হলে হয়তো ভালো কথা বলার লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন হতো। সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার যে দিকনির্দেশনা দরকার, তা আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় অনুপস্থিত। বাংলাদেশ বহুবার দুর্নীতিতে শীর্ষে থেকেছে, কারণ আমাদের চরিত্রে মানবিক গুণাবলীর অভাব। এই কারণেই আমরা র্যাঙ্কিংয়ে এগোতে পারছি না।”
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থীর মাঝে উপহার সামগ্রী ও রাতের খাবার বিতরণ করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. ফিরোজ মাহমুদ, কৃষিবিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আলী আফজাল, শেকৃবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবুল হাসান, কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম এবং কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম সহ সংগঠনটির সাথী সদস্যবৃন্দ।
একে