মোঃ রানা ইসলাম, শেকৃবি প্রতিনিধি:
রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের নদী ও উপকূলীয় অঞ্চলের পানিতে কীটনাশক, ওষুধের অবশিষ্টাংশ ও পার এন্ড পলিফ্লুরোঅ্যালকাইল পদার্থ(পিএফএএস) সহ বিভিন্ন মাইক্রো–দূষক শনাক্তকরণে গবেষণা অগ্রগতি তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) আয়োজিত এ সেমিনারে শনিবার সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবনের ষষ্ঠ তলার কনফারেন্স রুমে শেকৃবি রিসার্চ সিস্টেম (SAURES) গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরে। গবেষণায় দেশের নদী, উপকূলীয় অঞ্চল, ঢাকা ওয়াসার বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউশন বুথ এবং নদ-নদীর মাছের নমুনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মাইক্রো–দূষণ শনাক্ত হওয়ার কথা জানানো হয়।
গবেষকরা বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে শীত ও বর্ষা—দুই মৌসুমের পানি ও মাছের নমুনায় কীটনাশক, চিকিৎসা–সংশ্লিষ্ট ওষুধের অবশিষ্টাংশ এবং PFASসহ ক্ষতিকর মাইক্রো–দূষক পাওয়া গেছে। দুষণ বিশ্লেষণে ব্যবহৃত উন্নত প্রযুক্তির সনাক্তক্ষমতা ছিল ০.০১ ন্যানোগ্রাম/লিটার, যার মাধ্যমে ৫০০টিরও বেশি রাসায়নিক যৌগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে। তারা জানান, মাগুর মাছসহ হাওর–নদীর বিভিন্ন স্তরের পানি থেকে সংগৃহীত নমুনায় এসব দূষক স্পষ্টভাবে পাওয়া গেছে এবং এ তথ্য আন্তর্জাতিক গবেষণার ফলাফলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ঢাকা ওয়াসার ডিস্ট্রিবিউশন ওয়াটার বুথের নমুনায় PFAS–এর ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রা পাওয়া গেছে বলেও গবেষকরা সেমিনারে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, কৃষিজরাসায়নিক, ওষুধের অবশিষ্টাংশ এবং শিল্পবর্জ্য এসব মাইক্রো–দূষণের প্রধান উৎস, যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের সম্ভাব্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এসব ঝুঁকি নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ ও বৈজ্ঞানিক নিয়ন্ত্রণ–কৌশলের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন গবেষকরা।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুইডেনের উমিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইয়ারকার ফিক। কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আরিফুল ইসলাম, ড. তাজুল ইসলাম, ড. সিরাজুল ইসলাম ও ড. আব্দুল কাইউম বাংলাদেশের নদী–উপকূলীয় অঞ্চলে মাইক্রো–দূষকের উৎস, বিস্তার, ঝুঁকি এবং তা নিয়ন্ত্রণের উপায় নিয়ে তাঁদের গবেষণালব্ধ তথ্য তুলে ধরেন। তারা আরও বলেন, এসব দূষকের দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ দেশের পানি নিরাপত্তা গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাউরেস এর পরিচালক প্রফেসর ড. এফ. এম. আমানুজ্জামান। প্রধান অতিথি ছিলেন শেকৃবির উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আব্দুল লতিফ। তিনি বলেন, “এ ধরনের গবেষণা দেশের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতেও বিশ্ববিদ্যালয় এ গবেষণায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।” বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. বেলাল হোসেন, ট্রেজারার প্রফেসর আবুল বাশার এবং নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের চেয়ারম্যান মো. জাকারিয়া। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ড. মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী।
সেমিনারে সাংবাদিক ফাইজুল সিদ্দিকীর উপস্থাপনায় বাংলাদেশের নদী–উপকূলীয় অঞ্চলের মাইক্রো–দূষণ নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সরকারি নীতি–নির্ধারক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সংস্থা, উদ্ভাবক, দাতা সংস্থা ও গণমাধ্যমকর্মীরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
এমআই