ইবতেশাম রহমান সায়নাভ, বেরোবি প্রতিনিধি:
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) নির্বাচনে আবারও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগের ঘটনায় ঘটেছে। পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহ্জামান প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে তিনি নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পারিবারিক কারণে তিনি দায়িত্ব ছাড়ছেন।
পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে কি না—এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হারুন অর রশিদ বলেন, “ তিনি আসলে পদত্যাগ করেননি, পদত্যাগ শব্দটিও ব্যবহার করেননি। তার কিছু পারিবারিক সমস্যা আছে। তার জন্যে তিনি আমাদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন যাতে আমরা মানবিক দিক বিবেচনা করে কনসিডার করি।"
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অনুপস্থিতিতে থমকে গেছে নির্বাচনী কার্যক্রম। ২৬ নভেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ এবং ২৭ নভেম্বর মনোনয়ন বিতরনের তারিখ নির্ধারিত থাকলেও যথাসময়ে তা শুরু হয়নি।
মনোনয়ন ফর্ম সংগ্রহ করতে আসা ম্যানেজমেন্ট এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব বলেন, “ আমি আজকে মনোনয়ন সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম, কিন্তু চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ না হওয়ায় মনোনয়ন কিনতে পারিনি। নির্বাচন কমিশন আশ্বাস দিয়েছে আজ রাতের ভিতর ভোটার তালিকা প্রকাশ করে আগামী দুইদিন মনোনয়ন ফর্ম বিক্রি করবে।"
এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্রাকসু নির্বাচন, সমাবর্তন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার কারণে ডিসেম্বরের শীতকালীন ছুটি পিছিয়ে জানুয়ারিতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে অসন্তুষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন, বিক্ষোভ, উপাচার্য দপ্তরের সামনে অবস্থান এবং স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
সর্বশেষ গত বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৮তম সিন্ডিকেট মিটিং চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা সিন্ডিকেট রুম অবরোধ করে।
শিক্ষার্থীরা দাবি করে, শীতকালীন ছুটি যথাসময়ে রেখে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই নির্বাচন করতে হবে। অন্যদিকে আরেক অংশের দাবি—শীতকালীন ছুটি এবং যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দুটোই প্রয়োজন; তড়িঘড়ি কোনো নির্বাচন তারা চায় না।
একপর্যায়ে প্রশাসন ঘোষণা করে ব্রাকসু নির্বাচন ২৪ ডিসেম্বর এবং শীতকালীন ছুটি শুরু হবে ২৫ ডিসেম্বর।
শিক্ষার্থীরা বলেন, “আমাদের বহুল প্রতীক্ষিত নির্বাচন যথা সময়ে অনুষ্ঠিত করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের পর ব্রাকসু নিয়ে বাড়তি রাজনৈতিক প্রভাবের ঝুঁকি থাকায় দ্রুত নির্বাচন জরুরি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক সময়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচন চায়।”
নির্বাচন কমিশনের সদস্য ড. প্রদীপ কুমার সরকার জানান, “ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পেরেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। আমাদের কাছে ২/৩টা শিক্ষাবর্ষের ছাত্রদের তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্টপক্ষকে চিঠি দিয়েছি, তারা দিলে আমরা খুব দ্রুত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে পারব। আমরা ২৪ তারিখ ভোট ধরেই কাজ এগিয়ে যাচ্ছি।
নির্বাচন কমিশনের সদস্য মাসুদ রানা কোনো ধরনের চাপ অনুভব করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অবশ্যই কোনো চাপ নেই। আমি একটু আগেও নির্বাচনী কাজ করে এসেছি। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৪ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী বিজনেস অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. ফেরদৌস রহমান পদত্যাগ করেন। এরপর ১১ নভেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেন প্রফেসর ড. মো. শাহ্জামান। ঘোষিত তফসিলে ছিল—
খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ ২২ নভেম্বর, আপত্তি ও নিষ্পত্তি ২৪ নভেম্বর, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ ২৬ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বিতরণ ও দাখিল (ডোপ টেস্টসহ) ২৭ নভেম্বর–৩ ডিসেম্বর, বাছাই ৪–৬ ডিসেম্বর, প্রাথমিক তালিকা ৭ ডিসেম্বর, আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি ৮ ডিসেম্বর, মনোনয়ন প্রত্যাহার ৯ ডিসেম্বর, প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা ১০ ডিসেম্বর এবং ভোটগ্রহণ, গণনা ও ফলাফল ঘোষণা ২৪ ডিসেম্বর।
এমআই