হেল্থ ডেস্ক:
বছরজুড়ে কম-বেশি চুল পড়া স্বাভাবিক হলেও শীতকালে যেন এর মাত্রা হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। গোসল বা চুল আঁচড়ানোর সময় এক গোছা চুল ঝরে পড়া দেখে অনেকেরই উদ্বেগ বাড়ে। কিন্তু কেন এই ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে চুলের এই দুর্বলতা দেখা দেয়? এর পেছনের কারণগুলো জেনে সঠিক যত্নে শীতেও ধরে রাখা সম্ভব চুলের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য।
কেন শীতকালে বাড়ে চুল পড়ার সমস্যা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতকালে চুল পড়ার মাত্রা বৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু পরিবেশগত ও শারীরিক কারণ দায়ী:
১. শুষ্ক আবহাওয়া ও আর্দ্রতার অভাব
- শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা (moisture) নাটকীয়ভাবে কমে যায়। এই শুষ্ক বাতাস চুল ও মাথার ত্বক (scalp) থেকে প্রাকৃতিক আর্দ্রতা শোষণ করে নেয়। ফলে স্ক্যাল্প শুষ্ক, রুক্ষ এবং সংবেদনশীল হয়ে পড়ে।
২. খুশকি ও স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য
- শুষ্ক স্ক্যাল্প দ্রুত চুলকায় এবং এতে খুশকির উপদ্রব বাড়ে। এই খুশকি চুলের ফলিকলগুলোকে (Follicles) দুর্বল করে দেয়, যা চুল পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়াও, ঠাণ্ডা আবহাওয়া ও দূষণের কারণে স্ক্যাল্পে ময়লা জমে চুলের গোড়া দুর্বল করে।
৩. অতিরিক্ত গরম জলের ব্যবহার
- ঠাণ্ডা এড়াতে শীতে বেশিরভাগ মানুষই খুব গরম জলে চুল ধোন। গরম জল স্ক্যাল্পের প্রাকৃতিক তেল (Sebum) কমিয়ে দেয়, যা চুলকে আরও শুষ্ক, ভঙ্গুর ও দুর্বল করে তোলে। এতে চুলের স্বাভাবিক প্রোটিন নষ্ট হয়ে যায়।
৪. শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘাটতি
- অনেক সময় ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টায় খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনে শরীরে কিছু প্রয়োজনীয় উপাদানের অভাব দেখা দেয়।
- আয়রনের ঘাটতি: আয়রনের অভাবে চুল পড়ার সমস্যা বাড়ে।
- ভিটামিন ডি ও বি এর অভাব: এই ভিটামিনগুলো চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদের ঘাটতি চুল পড়ার কারণ হতে পারে।
- প্রোটিনের অভাব: চুলের প্রধান উপাদান প্রোটিন। লো-প্রোটিন ডায়েট চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত করে।
শীতে চুল ঝরা রোধে কার্যকরী করণীয়
শীতকালে চুলের বাড়তি যত্ন প্রয়োজন। নিচে কিছু সহজ টিপস দেওয়া হলো যা আপনার চুলের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে:
১. হালকা গরম জল ব্যবহার করুন
- চুল ধোয়ার সময় খুব গরম জল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। সম্ভব হলে কুসুম গরম জল ব্যবহার করুন। এটি স্ক্যাল্পের প্রাকৃতিক তেল রক্ষা করবে এবং চুলের রুক্ষতা কমাবে।
২. নিয়মিত তেল মালিশ ও কন্ডিশনার
- সপ্তাহে অন্তত দু'বার হালকা গরম তেল (যেমন: নারকেল বা আমন্ড তেল) দিয়ে স্ক্যাল্পে আলতোভাবে মালিশ করুন। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের গোড়া মজবুত করবে। শ্যাম্পুর পর অবশ্যই চুলের মাঝের অংশ থেকে ডগা পর্যন্ত কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। তবে, কন্ডিশনার যেন স্ক্যাল্পে না লাগে।
৩. সঠিক শ্যাম্পু ব্যবহার
- শীতকালে রুক্ষতা এড়াতে কেমিক্যালমুক্ত বা মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। এটি স্ক্যাল্পের স্বাভাবিক পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। খুশকির সমস্যা থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টি-ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
৪. পুষ্টিকর খাবার
- চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ভেতর থেকে পুষ্টি জোগানো জরুরি।
- প্রোটিন: ডিম, মাছ, মাংস, ডাল আপনার খাদ্যে রাখুন।
- ভিটামিন ও খনিজ: বাদাম, মিষ্টি আলু, সবুজ শাক-সবজি এবং ভিটামিন বি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খান।
- পর্যাপ্ত জল: শরীরকে হাইড্রেটেড (hydrated) রাখতে প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন।
৫. ভেজা চুলে সতর্কতা
- ভেজা চুল অত্যন্ত দুর্বল থাকে। তাই গোসলের আগে চুল আঁচড়ে জট ছাড়িয়ে নিন। ভেজা অবস্থায় চুল জোরে জোরে মুছবেন না বা আঁচড়াবেন না। ভেজা চুল দ্রুত শুকানোর জন্য হেয়ার ড্রায়ারের অতিরিক্ত তাপ ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন।
৬. হেয়ার মাস্ক ব্যবহার
- সপ্তাহে একদিন কলা, মধু, ডিম বা অ্যালোভেরা জেল দিয়ে তৈরি ঘরোয়া হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করলে চুল পুষ্টি পাবে এবং উজ্জ্বল হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: যদি অত্যধিক চুল পড়া বা তীব্র খুশকির সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে থাকে, তবে অবশ্যই একজন ত্বক ও চুল বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নিলে চুল পড়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
এই শীতে আপনার চুলের যত্ন নেওয়া হোক আরও সহজ ও কার্যকরী। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং সঠিক যত্নের মাধ্যমে আপনার চুল থাকুক ঘন ও প্রাণবন্ত।
সময় জার্নাল/একে