আয়মান খান:
আপনি কি সকালে উঠে এক কাপ চা হাতে নিয়ে মোবাইল স্ক্রল করেন, ব্রেকফাস্ট বাদ দিয়ে অফিসের পথে বেরিয়ে যান, দুপুরে ফাস্ট ফুড খান আর রাতে “আজ তো খুব ক্লান্ত” বলে ব্যায়াম বাদ দেন? সাবধান! ডায়াবেটিস কিন্তু আপনার দরজায় কড়া নাড়ছে—আর সে দরজাটা আপনি নিজেই খুলে দিচ্ছেন।
চিনি—শুধু মিষ্টিতে নয়, ফাঁদ আছে সর্বত্র!
“আমি তো চা-তে এক চামচ চিনি দিই, তাতে আর কী?” — এই নিরীহ ভাবটাই সবচেয়ে বড় বিপদ। প্যাকেটজাত জুস, কেচাপ, এমনকি ‘ডায়েট’ লেখা বিস্কুটেও লুকিয়ে থাকে added sugar। গবেষণা বলছে, প্রতিদিন অতিরিক্ত চিনি খেলে ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ।
সমাধান: প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২৫ গ্রাম (প্রায় ৬ চা চামচ) চিনি গ্রহণে সীমাবদ্ধ থাকুন।
সারাদিন বসে থাকা—অফিসের নতুন রোগ
একটানা বসে কাজ করা মানে শরীরের মেটাবলিজম ঘুমিয়ে যায়। Harvard School of Public Health-এর গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে দুই ঘণ্টা অতিরিক্ত বসে থাকলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৭% বাড়ে।
সমাধান: প্রতি ৩০ মিনিটে উঠে একটু হাঁটুন, পানি পান করুন, অফিসের সিঁড়ি ব্যবহার করুন। শরীরকে মনে করিয়ে দিন, এখনো সে বেঁচে আছে!
ফাস্ট ফুড—দ্রুত খাবার, ধীর মৃত্যু
বিরিয়ানি, বার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই... আহা! জিভে জল আনে, কিন্তু রক্তে চিনি ঢালে। ট্রান্সফ্যাট আর অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট শরীরে ইনসুলিনের কাজ বাধাগ্রস্ত করে। American Diabetes Association বলছে, নিয়মিত ফাস্ট ফুড খাওয়া ব্যক্তিদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ।
সমাধান: সপ্তাহে একদিন ‘চিট ডে’ থাকলেও, বাকী দিনগুলোতে দেশি খাবার খান—ডাল, শাকসবজি, মাছ, ভাত পরিমাণমতো।
ঘুমের অভাব—মিষ্টি নয়, তেতো প্রভাব
রাতে তিনটা পর্যন্ত নেটফ্লিক্স দেখে সকালে অফিস ধরা মানেই শরীরকে শাস্তি দেওয়া। ঘুম কম হলে কর্টিসল নামের স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায়, যা ইনসুলিনকে দুর্বল করে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৬ ঘণ্টার কম ঘুমালে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৩০% বাড়ে।
সমাধান: অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম নিশ্চিত করুন। মোবাইলটা ঘুমাতে যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে দূরে রাখুন।
পানি কম, কোমল পানীয় বেশি—একটা বড় ভুল
অনেকে পানি খাওয়াকে “অলসদের কাজ” মনে করেন। কিন্তু শরীরে পানির অভাবে রক্ত ঘন হয়, ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমে। অন্যদিকে সফট ড্রিংকে থাকা ফ্রুকটোজ দ্রুত লিভারে চর্বি জমায়।
সমাধান: প্রতিদিন ৮–১০ গ্লাস পানি পান করুন, আর কোমল পানীয়ের জায়গায় রাখুন লেবু-পানি বা ডাবের পানি।
মানসিক চাপ—নীরব ঘাতক
চাপ শুধু অফিসে নয়, শরীরেও পড়ে। স্ট্রেস হরমোন ইনসুলিনের কাজকে বাধা দেয়, ফলে রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যায়।
সমাধান: প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট ধ্যান, প্রার্থনা, বা প্রিয় গানে মন দিন। একটু হাসুন—হাসিও একধরনের ইনসুলিন থেরাপি!
ডায়াবেটিস কোনো একদিনে হয় না, এটা অভ্যাসের ফসল। তাই এখনই একটু সচেতন হোন। চিনি কমান, হাঁটুন, ঘুমান, হাসুন।
মনে রাখবেন—ডায়াবেটিস দরজায় কড়া নাড়বে, কিন্তু দরজা খুলবেন কিনা সেটা আপনার হাতে।
এমআই