হাবিপ্রবি প্রতিনিধি
হাবিপ্রবির ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও সহকারী অধ্যাপক জুয়েল আহমেদ সরকার ফেসবুকে এক দীর্ঘ লেখায় শহীদ ওসমান হাদীকে হাইস্কুলের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। তাঁর মতে, তরুণদের সামনে অনুসরণযোগ্য রোল মডেলের অভাবই সমাজে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অন্যতম কারণ। অনেক নেতা থাকলেও তাঁদের জীবন থেকে তরুণরা দৈনন্দিন জীবনে গ্রহণযোগ্য উদাহরণ খুব কমই পায়। ফলে তরুণ প্রজন্ম সঠিক দিকনির্দেশনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জুয়েল আহমেদ সরকার লিখেছেন, শহীদ ওসমান হাদী ছিলেন এক অনন্য তরুণ নেতা, যিনি দেশপ্রেম, সততা, সাহসিকতা, মানবিকতা ও নেতৃত্বের গুণাবলিতে সমৃদ্ধ। তিনি জানতেন তাঁর ওপর হামলা হতে পারে, এমনকি প্রাণহানির আশঙ্কাও ছিল নিশ্চিত। তবুও তিনি পিছপা হননি, বরং দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এই আত্মত্যাগ তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে এবং তরুণদের সামনে এক বিরল উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ওসমান হাদী ছিলেন সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তিনি কোনো প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবার থেকে আসেননি। প্রথমে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন, পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। এই দুই শিক্ষামাধ্যমের অভিজ্ঞতা তাঁকে বাংলাদেশের অধিকাংশ তরুণের বাস্তবতার সাথে যুক্ত করেছে। তাঁর নির্বাচনী প্রচারণা ছিল জনমানুষের প্রচারণা—মানুষের সাথে মিশে যাওয়ার দক্ষতা, দরদ নিয়ে কথা বলার প্রবণতা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নতুন মডেল দাঁড় করানো তাঁকে মানুষের ‘ওসমান হাদী’ বানিয়েছে। এমনকি সাধারণ মানুষ তাঁকে অর্থ দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় সহায়তা করেছেন, যা বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে বিরল ঘটনা।
জুয়েল আহমেদ সরকার উল্লেখ করেন, শহীদ ওসমান হাদী শুধু রাজনীতির তাত্ত্বিক আলোচনায় সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তাঁর ‘ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার’-এর কার্যক্রম, সাংস্কৃতিক উদ্যোগ এবং রাজনৈতিক কর্মসূচি তরুণদের সামনে বাংলাদেশপন্থী রাজনীতি ও সংস্কৃতির বাস্তব রূপরেখা তুলে ধরেছে। ৩৬ জুলাইয়ের পর তরুণ সমাজ যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছে, তার একটি বাস্তবিক মডেল শহীদ হাদী দেখিয়ে গেছেন। তিনি সৎ ও দেশপ্রেমিক তারুণ্যের মডেল, জনদরদী নেতৃত্বের মডেল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণের মডেল হয়ে উঠেছেন।
জুয়েল আহমেদ সরকারের মতে, একজন তরুণ হিসেবে কীভাবে দেশকে ভালোবাসতে হয়, কীভাবে সততায়, সাহসিকতায় ও কর্মনিষ্ঠায় জীবনযাপন করতে হয় এবং সর্বোপরি কীভাবে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে ইনসাফভিত্তিক সমাজ গড়ার চেষ্টা করা যায়—তার বাস্তব উদাহরণ শহীদ ওসমান হাদী। তিনি একই সাথে সাহসী, সৎ, রাজনীতি সচেতন, সংস্কৃতি সচেতন এবং প্রবল দেশপ্রেমিক। তাই ওসমান হাদী তরুণদের জন্য শুধু অনুপ্রেরণা নন, বরং বাস্তব জীবনে অনুসরণযোগ্য রোল মডেল।
সবশেষে তিনি বলেন, শহীদ ওসমান হাদীকে হাইস্কুলের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে আগামী দিনের তরুণরা সঠিক দিকনির্দেশনা পাবে এবং ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে উদ্যমী হবে।
একে