বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

আজানের শব্দে ভাংগলো ঘুম যার

এক আমেরিকান নারীর ইসলাম গ্রহণের চমকপ্রদ কাহিনী

মঙ্গলবার, অক্টোবর ১৯, ২০২১
এক আমেরিকান নারীর ইসলাম গ্রহণের চমকপ্রদ কাহিনী

ডা. শরীফ কাদরী :

আমেরিকায় আপনি এককাপ চা খেতে কোথাও যেতে হলেও গাড়ি ছাড়া উপায় নেই। আর সে কারনে এমন অনেক মানুষ আছে যাদের ঘরে খাবার না থাকলে গ্যারেজে একটি গাড়ি থাকেই থাকে। খুব বেশীদিন হয়নি এদেশে এসেছি, গাড়ি কিনবো কিনবো করে কেনা হয়ে উঠেনি। তাই বাধ্য হয়েই উবারে চলাফেরা করতে হয়। 

ছোট্ট আমায়াহ আর তার মাকে সাপ্তাহিক বাজার করতে গ্রোসারী শপে (মুদিবাজার) যাবো "উবারে" করে। একজন প্রায় ৭০ বছর বয়েসী আমেরিকান শ্বেতাংগ রমনী আমাদের উবার ড্রাইভার। গাড়িতে উঠে কেমন আছেন, দিন কেমন গেলো টাইপের প্রশ্ন করা স্বাভাবিক আমেরিকান ভদ্রতা। আমিও সেমতে জিজ্ঞাসা করলাম কেমন আছেন? উত্তরের জন্য কোনভাবেই প্রস্তুত ছিলাম না। শুদ্ধ উচ্চারনে বলে উঠলেন আলহামদুলিল্লাহ্‌। 

আমি কি ভুল শুনলাম? তাই প্রশ্ন করলাম তুমি কি মুসলিম? কোথায় তোমার আসল বাড়ি। সে আবার বললো, আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমি মুসলিম। এই আমেরিকাতেই আমার বাপ দাদা চৌদ্দ পুরুষের ভিটে মাটি। আমি একেবারেই আমেরিকান। 
মনের বাসনা থেকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি ইসলামে আসলে কি করে? উত্তর এলো আমি ইসলাম বেছে নেইনি, ইসলামই আমাকে বেছে নিয়েছে। 

তাঁকে বললাম তোমার গল্প কি আমাকে শোনাবে। ভদ্র মহিলা মুচকি হেসে শুনাতে শুরু করলো ঘুম ভাঙ্গার গল্প। আসুন তার মুখেই সে গল্প শুনি... 

আমেরিকার মন্টানা অংগরাজ্যে এক খ্রিষ্টান পরিবারে আমার জন্ম। জন্মের পর যখন বুঝজ্ঞান হতে শুরু করলো, আমি পরিবারের অন্যান্য ভাইবোনদের সাথে কেন যেন মিশতে পারতাম না ভালোভাবে। তুমি তো জানো পাহাড় আর নদী ঘেরা এক প্রাকৃতিক লীলাভূমি মন্টানা। আমি একা একা প্রায় দূর দুপুরে দূর পাহাড়ে চলে যেতাম, ভাবতাম আমি কেন দুনিয়ায় এসেছি, আমার কি কারনে আসা। আমি যেন কেমন হাহাকার বোধ করতাম মনের ভেতর। একটু তরুনী হবার পর থেকে আমার বন্ধুরা ভাইবোনেরা বন্ধুরা বিভিন্ন ক্লাবে গিয়ে মদ খেতো, আনন্দ করতো। আমি তাঁদের সাথে যেতাম না, যদিও আমি খ্রিষ্টান কিন্ত কোনদিন আমি একটি বারের জন্যও মদ পান করিনি, আধুনিক খ্রিষ্টধর্মে মদপান নিষিদ্ধও নয়।

আমার বন্ধুরা ছোট ছোট জামা পরে সমুদ্রে ঘুরে বেড়াত, সুইমিং কষ্টিউম পরে সাঁতার কাটতো, কিন্ত আমি কোনদিন ওসব পরতে পারতাম না। আমার বিবেক আমাকে বাঁধা দিতো। আমি জানিনা কেন পারতাম না। 

আমি আবিষ্কার করলাম আমি আসলে একা ভীষন একা। আমার কোন ভালো বন্ধু নেই, ভাইবোনেরা আমাকে সময় দিতোনা। একসময় আমার বিয়ে হলো, সন্তান দুনিয়ায় আসলো। আমার ছেলে বড় হলো।

কিন্তু বিপত্তি ঘটলো গত পনেরো আগে। একদিন গভীর রাতে স্বপ্নে আমি এক অজানা কন্ঠে কিছু গান মধুর সুরের অজানা ভাষার গান শুনতে পেলাম। বাক্যগুলো ছিলো এমন আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আশশাহদু আল্লাইলাহা ইল্লা আল্লাহ্‌...
পরদিন সকালে সে স্বপ্নের কথা ভুলে গেলাম। কিন্তু না প্রতি রাতেই আমি স্বপ্নে দেখি সে মধুর সুরের গান। আমি অস্থির হয়ে গেলাম। চিকিৎসকের শরনাপন্ন হয়ে ঘুমের ঔষধ খেতে লাগলাম। যতই ঘুমের ঔষধ খাইনা কেন মাঝরাতে সে মধুর শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। 

এভাবে প্রায় ছয়মাস কেটে গেলো। একদিন টিভিতে আমেরিকায় মুসলিম সন্ত্রাসীদের নিয়ে একটি পর্ব প্রচার হচ্ছিলো। আমি পাশের রুমে ছিলাম, সেখানে এই গানও দেখাচ্ছিলো। আমি দ্রুত টিভির সামনে দাঁড়ালাম। হ্যাঁ এইতো সে গান যা আমি স্বপ্নে দেখছি গত ছয়টি মাস ধরে। এইতো সেই সন্ত্রাসীদের গান। আমি ভয় পেয়ে গেলাম, হে গড আমি কি তাহলে সন্ত্রাসী হয়ে যাচ্ছি। 

ইন্টারনেটে সার্চ দিতাম সন্ত্রাসী সংগীত, সন্ত্রাসীদের গান, মুসলিম সংগীত এসব নামে। খুঁজতে একদিন পেয়ে গেলাম সেই সংগীত। জানলাম এর নাম আজান। মুসলিমদের নামাজে আহবানের ডাক। আমার মত খ্রিষ্টান পরিবারে জন্মনেয়া একজন মানুষকে কে শোনালো সে আজান। কে আমাকে আহবান করছে? আমি বুঝতে চাইলাম, ইসলাম কি? রব কি, রাসুল কে? কবর-হাশর, মিজান নিয়ে আমার বিস্তর পড়াশোনা শুরু হয়ে গেলো। আমি বুঝলাম আকাশের মালিক আমাকে দ্বীনের জন্য কবুল করেছেন। আমার সহস্র রাতের ঘুম ভেঙ্গে গেলো,আমি জেগে উঠলাম। 

বুঝলাম ইসলাম সন্ত্রাসীদের ধর্ম নয়, বরং সন্ত্রাসীরা ইসলামের নাম ব্যবহার করে মাত্র। পরদিন খুব ভোরে আমি জুমা মসজিদে গিয়ে শাহাদা পাঠ করলাম। তুমি কি জানো এ কালেমার বিনিময়ে আমি কি হারিয়েছি? 

আমার স্বামী আমাকে ত্যাগ করলেন। যে ছেলেকে আমি পেটে ধরছি বড় করেছি, সে ছেলে আমাকে ত্যাগ করলো। আমিতো আগেই একা ছিলাম, এখন আরো একা হয়ে গেলাম। আজ পনেরো বছর আমি একা। 

তুমি কি জানো এতো কিছুর বিনিময়ে আমি কি পেয়েছি? আমি আমার আল্লাহ্‌কে পেয়েছি। তুমি জানো এতো কিছুর বিনিময়ে আমি কি পেয়েছি? ঐ যে ছোটবেলা থেকেই আমার অন্তরে যে হাহাকার ছিলো, যে না পাওয়ার বেদনা ছিলো, আমি বুঝেছি আমার হাহাকার ছিলো কালেমার জন্য, আমার হাহাকার ইসলামের জন্য। আমার মনের শুন্যতা দূর হয়েছে। আমি এখন নিজেকে পরিপূর্ন মনে করছি। 

তুমি জানো এই বুড়ো বয়সে কিছু খাবারের জন্য আমাকে উবার চালাতে হয়, কয়েক বছর আগে আমি একজন মিশরীয় মুসলিমকে বিয়ে করেছি শুধু জীবনের একাকীত্ব গোছাতে কিন্তু সে এখন ক্যান্সার আক্রান্ত, তাকেও হয়তো রবের কাছে চলে যেতে হবে। আমি চেষ্টা করছি তার যথেষ্ট সেবা করতে। আমার ছেলেটাকে আমি দেখিনা আজ দুবছর হলো। আমার ছেলের ঘরে নাতি হয়েছে অনেকদিন, কিন্তু জানো আমি তাকেও দেখিনি অনেকদিন হলো। 

আমি চাইলেই স্বাভাবিক জীবনে চলতে পারতাম ।স্বামী সন্তান নিয়ে আনন্দে থাকতে পারতাম, কিন্তু আমি দুনিয়া এবং আখিরাতের মাঝে হিসেব করে দেখলাম, আমার জন্য আখিরাতই মংগল। এখন যদি আমি না খেয়ে মরেও যাই আমার দুঃখ থাকবেনা, জানিনা কখন রবের ডাক এসে যায়। আমি দ্রুত আমার রবের সাথে দেখা করতে চাই, তাঁকে বলতে চাই ওগো আরশের মালিক শুধু তোমায় দুচোখ ভরে দেখবো বলে আমি সব ছেড়ে এসেছি। 

আমাদের গাড়ি গন্তব্যে এসে পৌছেছে, গাড়ি থেকে নামতে পারছিনা আমি। চোখের পানিতে বুক ভেসে গেছে সেই কবে। শরীর অবসাদ হয়ে আসছে। এই মহিমান্বিত রমনীর অনুমতি নিয়ে তার একটি ছবি তুললাম, ইন্টারনেটে শেয়ারের অনুমতিও পেলাম। 

তিনি হিজাব পরতেন, কিন্তু এখানে তাকে নানা কটু কথার শিকার হতে হয়েছে, তাই তিনি এখন কাজের সময় হিজাব পরেন না। তার আমেরিকান নাম এন্ড্রি। মুসলিম নাম তিনি নিজেই খুঁজে রেখেছেন সাবাহ- অর্থাৎ প্রত্যূষ। যেহেতু তিনি সুবহে সাদিকের সময় রাব্বে কায়েনাতে আহবান শুনেছেন তাই এ নাম করন। 

সাবাহ আমাদের নামিয়ে দিয়ে দ্রুত আরেকটি ট্রিপ ধরার জন্য এগিয়ে যাচ্ছেন, মাঝখানে আমাকে অস্থির সময়ে ফেলে গেলেন। ওগো আরশের মালিক তুমি তোমার সাবাহকে দেখে রেখো। সাবাহকে দেখে আমি আবারো আবারো বুজেছি, ওগো রহমান তুমি সত্য তোমার দ্বীন সত্য তোমার আলো সত্য।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক। 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল