আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা এবং আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক সম্ভাব্য শীর্ষ সম্মেলনের আগে, পুতিন জানিয়েছেন—তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি নতুন পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তির ব্যাপারে আগ্রহী।
পুতিনের এই প্রস্তাব এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তিগুলো চায়, রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করুক। তবে পুতিন সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তার মতে, ইউক্রেন সংকট একটি জটিল নিরাপত্তা পরিস্থিতির অংশ, যা পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে সম্পর্ককে শীতল যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বিপজ্জনক পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুতিন হয়তো নিজেকে একজন শান্তিপ্রিয় ও কৌশলী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছেন। তিনি এমন বার্তা দিতে চাইছেন যে, ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝেও তিনি বৃহত্তর বিশ্বশান্তি নিয়ে ভাবছেন। এই প্রস্তাব হয়তো ট্রাম্পকে বোঝাতে সহায়তা করবে—রাশিয়া কিংবা তার মিত্র দেশগুলোর ওপর নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ এখনই উচিত নয়। বিশেষ করে যখন ওয়াশিংটন নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিচ্ছে।
পুতিনের এই প্রস্তাবনা আরও একটি বড় উদ্দেশ্যের অংশ হতে পারে, আর তা হলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন। শুধু নিরাপত্তা নয়, বাণিজ্য ও অর্থনীতিকেও গুরুত্ব দিচ্ছে মস্কো।
অন্যদিকে, পুতিনের বক্তব্যে আরেকটি বার্তা সুস্পষ্ট—তিনি পরমাণু শক্তিকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমীকরণে একটি প্রভাবশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুর দিক থেকেই পুতিন বহুবার ইঙ্গিত দিয়েছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়ালে তা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে গড়াতে পারে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার এখন রাশিয়ার দখলে। সামরিক বা অর্থনৈতিক শক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও, পারমাণবিক অস্ত্রের দিক থেকে রাশিয়ার এই শ্রেষ্ঠত্ব পুতিনকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে অনেকটাই সমান অবস্থানে দাঁড় করায়।
বর্তমানে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে একটি চুক্তি চালু আছে। সেটি হলো ‘নতুন স্ট্র্যাটেজিক আর্মস রিডাকশন ট্রিটি’ বা নিউ স্টার্ট চুক্তি। ২০১১ সালে কার্যকর হওয়া এই চুক্তির মেয়াদ ২০২১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আরও পাঁচ বছরের জন্য বাড়ান। ফলে এটি কার্যকর থাকবে ২০২৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
তবে ২০২৩ সালে, রাশিয়া এই চুক্তি থেকে নিজেদের অংশগ্রহণ ‘স্থগিত’ করে। যদিও তারা জানায়, অস্ত্র সীমারেখা মেনে চলবে। তবুও, এই অনিশ্চয়তা বিশ্লেষকদের শঙ্কিত করছে। তারা বলছেন, যদি এই চুক্তি আর না বাড়ে বা বিকল্প কিছু না আসে, তাহলে উভয় পক্ষই অস্ত্রের সংখ্যা বৃদ্ধির দিকে যেতে পারে। এতে বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে।
এমআই