আহসান শামীম, চবি প্রতিনিধি:
'মিনার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়' এর আয়োজনে 'সিরাত মাহফিল ও পুরস্কার বিতরণী ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ড. মিজানুর রহমান আজহারী। এই অনুষ্ঠানে মহানবীর (সা.) জীবনের সীরাত পাঠ প্রতিযোগিতায় ১০০ জন বিজয়ীকে পুরুস্কার প্রদান করা হয়েছে।
বুধবার আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের মিলনায়তনে এ সিরাত মাহফিল ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়েছে। মুজাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. আ.ক.ম. আব্দুল কাদের।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোঃ কামাল উদ্দিন, চবির সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী, আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন তালুকদার, মিনারের চেয়ারম্যান ও চবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী এবং চাকসু ভিপি ইব্রাহীম হোসেন রনিসহ আরও অনেকে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, রাসুল (সঃ) জীবনে আমাদের প্রত্যকের জানা উচিত। রাসুলের জীবনী না জানার কারণে আজ আমাদের সমাজ রাষ্ট্র অধপতনের দিকে যাচ্ছে। আমরা দুনিয়ার অমুক নেতা তমুক নেতার অনুসরণ করি অথচ মহা মানব রাসুলের জীবনী সম্পর্কে কিছুই জানিনা। আমাদের প্রত্যেকের অন্তত একটা করে সীরাত পাঠ করা উচিত।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন বলেন, একজন শিক্ষক হিসেবে আমাদের কাজ হচ্ছে কথা বলে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান দেওয়া। আমরা যে ব্যাগগ্রাউন্ড থেকে শিক্ষা অর্জন করেছি সেখানে রাসুল (সঃ) সম্পর্কে কোন পাঠ্যসূচি না থাকায় কিছুই জানতে পারিনি। অথচ কাল মার্ক্স, লেলিন, মেকিয়ালিসহ যত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আছে সবাই হলো আমার প্রিয় নবীর ফটোকপি। অথচ রাসুল (সঃ) হচ্ছেন একজন আদর্শ রাষ্ট্র নায়ক। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থায় সেই বিষয়টা কখনও উল্লেখ করা হয়না। আমরা পশ্চিমা শিক্ষা ব্যবস্থা অনুকরণ করতে অভ্যস্থ। আমাদের সবার উচিত রাসুলের জীবনী অনুসরণ অনুকরণ করা।
মিজানুর রহমান আজহারী তিনি রাসুল (সঃ) জীবনের গুণাবলি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) ছিলেন এক অনন্য নেতা, যিনি মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নেতৃত্বের পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে ছিল না কোনো স্বার্থপরতা, ছিল না ক্ষমতার অহংকার; বরং ছিল সেবা, ভালোবাসা ও মানবকল্যাণের অঙ্গীকার।
নবীজির নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বারোটি গুণ হলো, আল্লাহভীতি ও তাকওয়া, ন্যায়পরায়ণতা, দূরদৃষ্টি, সহনশীলতা, পরামর্শ গ্রহণের মনোভাব, দয়া ও মানবিকতা, সাহস ও দৃঢ়তা, সহযোগিতার চেতনা, বিনয়, যোগাযোগ দক্ষতা, নৈতিক দৃঢ়তা এবং আত্মত্যাগ। এই গুণাবলিগুলোই রাসুল (সঃ)-এর নেতৃত্বকে করেছে সর্বজনীন ও কালজয়ী। একজন আদর্শ নেতা কেবল আদেশদাতা নন, তিনি অনুসরণের যোগ্য পথপ্রদর্শক— যেমন ছিলেন প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সঃ)। আজকের পৃথিবীতে নেতৃত্বের যে সংকট আমরা দেখি, তার সমাধান নিহিত আছে রাসুল (সঃ)-এর এই গুণাবলির মধ্যে। যদি নেতা ও অনুসারী উভয়েই তাঁর আদর্শকে অনুসরণ করে, তবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে ন্যায়, শান্তি ও মানবিকতা।
সীরাত পাঠ প্রতিযোগতায় অতিথিরা বিজয়ীদের প্রথম পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয়েছে ল্যাপটপ, ২য় পুরস্কার হিসেবে রয়েছে ট্যাব এবং ৩য় পুরস্কার হিসেবে স্মার্টফোন। ৪র্থ থেকে ২০তম স্থান অধিকারীদের সম্মানজনক অর্থ এবং ২১ থেকে ১০০তম পর্যন্ত স্থান অর্জনকারীদের ইসলামি বই পুরস্কৃত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, 'সীরাত পাঠ প্রতিযোগিতা' এর রেজিস্ট্রেশনের শেষ সময় ছিল চলতি মাসের ২৩ অক্টোবর। এর প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২৫ অক্টোবর রাত ১০টায়। যা অনলাইনে এমসিকিউ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়। সশরীরে চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২৬ অক্টোবর।
এমআই