বুধবার, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫
ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচন যেন বিএনপির জন্য এক কঠিন আয়না। দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলে আসছিলেন—সামনের নির্বাচন সহজ হবে না, অদৃশ্য শক্তির সাথেও লড়তে হতে পারে। তখন অনেকেই হয়তো গুরুত্ব দেননি, কিন্তু ডাকসুর নির্বাচনের ফল সেই সতর্কবার্তাকেই নতুন করে মনে করিয়ে দিলো।
কেন হারলো বিএনপি?
প্রশ্নটা এখন সবার। কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, দলের ভেতরে বহু বছর ধরে অবহেলিত কর্মীরা আড়ালে পড়ে গেছেন। যারা নানা নির্যাতন সয়েও টিকে আছেন, তাদের প্রাপ্য জায়গা দেওয়া হয়নি। বরং বিতর্কিত কিংবা সমালোচিত মুখগুলোই সামনে চলে এসেছে। এর ফলে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে।
‘ওল্ড ফেস সিনড্রোম’
৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপির যে সব জেলা সম্মেলন হয়েছে, প্রায় সব জায়গাতেই পুরোনো চেহারাগুলোকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সামনে আনা হয়েছে। নতুন কোনো নেতৃত্ব উঠে আসেনি। এর মধ্য দিয়ে পরিষ্কার হয়ে গেছে—আগামী নির্বাচনের মনোনয়নেও সম্ভবত সেই মির্জা আব্বাস মার্কা নেতারাই প্রাধান্য পাবেন।
তাদের অবদান, ত্যাগ—এসব প্রশ্নাতীত। কিন্তু ইতিহাস বিজয়ীদেরকেই মনে রাখে, ব্যর্থ আন্দোলনের নেতাদের নয়। ভোটাররা আজকের দিনে ‘মার্কা’ কিংবা অতীতের স্মৃতি দেখে ভোট দেন না।
যুবসমাজের দূরত্ব
এখনকার ভোটাররা হলো টিকটক–রিলস প্রজন্ম। তারা বর্তমানকে নিয়ে বাঁচে, ভবিষ্যতের স্বপ্ন খোঁজে। পাকিস্তান ইস্যু কিংবা ভারতের ছায়া টেনে আনার মতো পুরোনো প্রোপাগান্ডা আর তাদের মনে সাড়া জাগায় না। ডাকসুর নির্বাচনে তার প্রমাণ মিলেছে।
যে প্রজন্ম তিন সেকেন্ডে পছন্দ না হওয়া ভিডিও স্ক্রল করে বাদ দেয়, তারা একইভাবে তিন সেকেন্ডে রাজনৈতিক দলকেও বাতিল করে দিচ্ছে।
বিএনপির করণীয় কী?
১. Leadership Reset – স্থায়ী কমিটির চেহারা দেখে অনেকেই বলেন, যেন বৃদ্ধাশ্রম! এখনই নতুন প্রজন্মকে সামনে আনতে হবে। অভিজ্ঞতা ও উদ্যমের ভারসাম্য তৈরি করতে হবে।
২. Youth-centric Politics – তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছাতে তাদের ভাষা, তাদের ভিজ্যুয়াল কালচার, তাদের স্বপ্নের সাথে সংযোগ স্থাপন জরুরি।
৩. Political Talent Hunt – বিভিন্ন সেক্টরে (টেক, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া) তরুণ প্রতিভাবানদের খুঁজে দলে আনতে হবে। তারা নিজেরা আসবে না, বরং অফার দিতে হবে। প্রয়োজনে তারেক রহমানকে সরাসরি ফোন করে ডাকতে হবে।
৪. Narrative Reset – অতীত নয়, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সমাধানমূলক রাজনীতি দরকার। ভোটারদের সামনে সহজ প্রশ্নের জবাব থাকতে হবে: “কেন বিএনপি?”
৫. Digital-first Strategy – আগামী রাজনীতি হবে ডিজিটাল যুদ্ধ। মিম, ইনফোগ্রাফিক, রিলস, ভিজ্যুয়াল ক্যাম্পেইন—এসবেই প্রভাব তৈরি হবে।
৬. Candidate Strategy – কমপক্ষে ৩০–৪০ শতাংশ আসনে একেবারে নতুন মুখ আনতে হবে। তাদের পেশাগত বিশ্বাসযোগ্যতা, জনসংযোগ ও আধুনিক ইমেজকে গুরুত্ব দিতে হবে।
শেষ জাগরণের ডাক
বিএনপির জন্য এটি শেষ ওয়েক আপ কল। ডাকসুর নির্বাচন ছিল ট্রায়াল, জাতীয় নির্বাচন হবে ফাইনাল। যদি এখনো পুরোনো ছকে বন্দি থাকে, তবে সামনে কেবল ভরাডুবিই অপেক্ষা করছে।
প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেভাবে খুঁজে খুঁজে বিভিন্ন জায়গা থেকে নতুন মানুষ এনে দল গড়েছিলেন, আজ তারেক রহমানেরও একইভাবে নতুন করে দল গড়ার সময় এসেছে।
সময় খুব কম। সুযোগও সীমিত। তবু একটাই সম্ভাবনা বাকি আছে—ঢেলে সাজান, ঢেলে সাজুন।
ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম
কলামিষ্ট, সমাজ সেবক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, মানবাধিকার কর্মী ও রাজনীতিবিদ
চেয়ারম্যান -বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গবেষণা কেন্দ্র